শিল দিয়ে মাথায় আঘাত করে ভ্যানচালককে হত্যা করে ছেলে, গ্রেফতার-২

খুলনা ব্যুরো: হত্যার ৮ মাস পর আজ শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বাড়ির বাথরুমের সেফটি ট্যাংকি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের শোলপুর গ্রামের ভ্যানচালক শেখ এনামুল ওরফে এন্টার লাশ।
এ ঘটনায় ছেলে মো. তানভীর শেখ (১৯) ও তার সহযোগী প্রতিবেশী জুম্মান শেখকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনার সত্যতা বিটিসি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রূপসা থানার (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন।
এ ঘটনায় ভ্যানচালক শেখ এনামুল ওরফে এন্টার বড় ভাই শেখ আলাউদ্দিন বাদী হয়ে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় ছেলে মো. তানভীর শেখ ও তার সহযোগী প্রতিবেশী জুম্মান শেখকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ছেলে তানভীরকে প্রতিবেশী জুম্মানের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে মানেনি। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা এনামুল ছেলে তানভীরকে মারধর করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন জুম্মন এবং তানভীর মিলে শিল পাটা দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করে। পরে লাশ ঘরের পেছনের বাথরুমের সেফটি ট্যাংকের স্লাব খুলে তার ভিতরে লুকিয়ে রাখে।
রূপসা থানার (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, চলতি বছরের ৬ মে বাবাকে মসলা বাটা শিল দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে হত্যা করে ছেলে। পরে তার সহযোগী জুম্মানকে নিয়ে লাশটি বাড়ির বাথরুমের সেফটি ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে তারা বাবা এনামুল হক এন্টা কোথাও চলে গেছে বা পানিতে পড়ে মারা যেতে পারে বলে এলাকায় প্রচারণা শুরু করে।
এরই মধ্যে গত বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ঘাতক ছেলে তানভির তার ছোট ভাই নাঈমকে (১১) মারধর করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাঈম চিৎকার করে বাবা হত্যার কথা সকলকে জানিয়ে দেয়। এরপর ছোট ছেলে নাঈমের বক্তব্যের জেরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নিহত এনামুলের কংকাল উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে গ্রেফতার দু’ আসামীকে আজ শুক্রবার খুলনা জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান ওসি।
(এনামূলের লাশটি এই বাথরুমের সেফটি ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে রাখাঁ হয়)
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ এনামুল ওরফে এন্টা যুগিহাটি গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল হকের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে কয়েক বছর আগে পাশ্ববর্তী শোলপুর গ্রামের টিনের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের সংসার বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু গত প্রায় এক বছর আগে বনিবনা না হওয়ায় পারিবারিক কলোহের জেরে স্ত্রী তাকে ছেড়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলার জনৈক আজগারকে বিয়ে করে চলে যান। পরবর্তীতে ছোট ছেলে ফাহিমকেও নিয়ে যান তার স্ত্রী। এসব কারণে মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিলেন এনামুল। এ কারণে দু’ ছেলে তানভীর শেখ ও নাইম শেখের সঙ্গেও তার ব্যবহার রূঢ় ছিল। এছাড়া প্রতিবেশী জুম্মান শেখের সঙ্গেও জমি নিয়ে বিরোধ ছিল তার। গত ৬ মে থেকে এনামুল নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে তার ছেলেদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে তার বাবা ঢাকায় চলে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, কিন্তু তারা যে নিজ বাবাকে হত্যা এবং লাশ বাথরুমের সেফটি ট্যাংকে লুকিয়ে রাখতে পারে- এটা তারা সামান্য সন্দেহও করেননি। এমনকি তারা ওই লাশ থাকা বাথরুমের মধ্যে মাঝে-মধ্যেই কেরোসিন তেল ঢেলে দিত গন্ধ লুকানোর জন্য। তাতেও বিষয়টি বুঝতে পারেননি তারা। কিন্তু নিহতের মেঝ ছেলে নাইমও তার বাবার হত্যার বিষয়টি জানতো। কিন্তু বিষয়টি কাউকে বলে দিলে তাকেও বাবার মত মেরে ফেলবে বলে ভয় দেয় বড় ভাই তানভীর। ফলে ভয়ে সে ঘটনাটি কাউকে বলেনি।
কিন্তু গত বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বড় ছেলে তানভীর তার ছোট ভাই নাইমকে মারধর করার কারণেই সে ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে দেয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, এতবড় ঘটনা এইটুকু ছেলের পক্ষে করাটা অসম্ভব। এর পেছনে আরও কেউ থাকতে পারে। এর সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার তানভীরের সহযোগী জুম্মান শেখের মা মনিরা বেগম অভিযোগ করেন, তার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কারণ নিহতের ছোট ছেলে তার নাম বলেনি। বিনা কারণে এ মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। তিনি তার মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.