শিরোপার ঘ্রাণ পেলে দমে না সিটি, হয়ে ওঠে দুর্বার

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: আর্সেনালের সবাই বৃহস্পতিবার রাতে নিশ্চয় প্রার্থনায় বসেছিল, ব্রাইটনের মাঠে যেন পর্যদুস্ত হয় ম্যানচেস্টার সিটি; ঠিক যেমনি আগের দিন মার্সিসাইড ডার্বিতে এভারটনের কাছে নাজেহাল হয়েছিল লিভারপুল। গানারদের সেই চাওয়ায় গুড়ে বালি। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরে, প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ভাগ্য নিজেদের হাতেই রেখেছে পেপ গুয়ার্দিওলার দল।
গুয়ার্দিওলার এই দলটি আসলে এমনই দুর্বার;  শিরোপার ঘ্রাণ পেলে যাদের দমে যাওয়ার ঘটনা বিরল। কেবল সবশেষ ম্যাচে সিটির আধিপত্যই আর্সেনালের নিরাশার কারণ নয়; মৌসুমের এই পর্যায়ে লিগের শিরোপা লড়াই যখন থাকে তুঙ্গে, চাপ হয়ে ওঠে ভীষণ মাত্রার, তখনই যেন গুয়ার্দিওলার দল হয়ে ওঠে আরও অপ্রতিরোধ্য। আগেও এর প্রমাণ মিলেছে, দেখা যাচ্ছে এবারও- যেন দুর্বলতার কোনো লেশ নেই দলটির।
লিগে গত মঙ্গলবার চেলসিকে ৫-০ গোলে গুঁড়িয়ে নিজেদের কাজটা সেরে রাখে আর্সেনাল। এই মূহূর্তে তারা আছেও পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। পরদিন এভারটনের মাঠে লিভারপুল ২-০ গোলে হেরে যাওয়ায় এখনও পয়েন্টের হিসেবে এককভাবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মিকেল আর্তেতার দল। কিন্তু তারপরও স্বস্তিতে নেই তারা।
মৌসুমের শুরু থেকেও অনেকটা সময় শীর্ষে ছিল আর্সেনাল, কিন্তু ডিসেম্বরে তাদের পথ হারানোর সুযোগে এবং নিজেরা হারানো ছন্দ ফিরে পেয়ে লড়াইয়ে উঠে আসে গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন সিটি। সেই থেকে দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় ব্রাইটনের মাঠে পুরোটা সময় আধিপত্য ধরে রেখে ৪-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে তারা। লিভারপুলকে তিনে নামিয়ে উঠে এসেছে দুইয়ে। 
৩৪ ম্যাচে ২৪ জয় ও ৫ ড্রয়ে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর্সেনাল। ৩৩ ম্যাচে সিটির পয়েন্ট ৭৬।  আর ৩৪ ম্যাচ খেলে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে লিভারপুল।
গত মৌসুমেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রেখে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আর্সেনাল। কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয়ভাগে দুই দফায় পথ হারায় তারা, যে সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেনি সিটি। শেষভাগে ধারাবাহিকভাবে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে তারা ঘরে তোলে টানা তৃতীয় লিগ শিরোপা।
এবারও তেমন কিছুর আঁচ মিলতে শুরু করেছে। অন্তত, গত ৬ ডিসেম্বরে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হারের পর লিগে সিটি যেভাবে অজেয় হয়ে উঠেছে, তাতে তেমন কিছু বলাই যায়। সবশেষ ওই হারের পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত দলটি, এর মধ্যে ১৪টিতেই জয়।
তবে, এখন পর্যন্ত সিটি একটি ম্যাচ কম খেলায় নিয়ন্ত্রণ আছে তাদের হাতেই। বাকি পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে জিতলে টানা চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতবে তারা, সবশেষ সাত মৌসুমে জিতবে ষষ্ঠবার। গত কয়েক বছরের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, সেই সম্ভাবনা এবারও খুব ভালোমতোই আছে। কেননা, তাদের ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া সব তারকা নিজেদের ফিরে পেয়েছেন যেন একেবারে ঠিক সময়মতো।
গত মৌসুমের রেকর্ড গোলদাতা আর্লিং হলান্ড এবার অবশ্য সেই খুনে রূপে নেই, বর্তমানে হালকা চোটে দলের বাইরেও আছেন নরওয়ের এই ফরোয়ার্ড। তবে, তার শূন্যতা মোটেও যে বুঝতে দিচ্ছেন না বাকিরা। দলটিতে শূন্যস্থান পূরণে সবসময় যেন নতুন কোনো জিনিয়াস প্রস্তুত থাকেন। এখন যেমন তারকা প্লেমেকার কেভিন ডে ব্রুইনে ও ফিল ফোডেন দারুণ জুটি গড়ে তুলেছেন, প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুমড়ে-মুচড়ে দিতে যাদের জুড়ি মেলা ভার। 
গোলও করছেন তারা। ব্রাইটনের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচেই যার প্রমাণ মিলেছে দারুণভাবে। বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ডে ব্রুইনের বেলায় বলা হয়ে থাকে, মাঠের সবখানে সবকিছু করতেই পারদর্শী তিনি; কেবল হেড ছাড়া! ব্রাইটনের বিপক্ষে ঠিক সেটাই কী অসাধারণ ভঙ্গিমাতেই না করে দেখালেন তিনি; কাইল ওয়াকারের ক্রসে দুর্দান্ত ডাইভিং হেডে শুরুতে দলকে এগিয়ে দেন। লিগে এ নিয়ে ৬৮ গোল হলো ৩২ বছর বয়সী ডে ব্রুইনের, হেডে এই প্রথম।
আর শেষে দ্বিতীয়ার্ধে চতুর্থ গোলটি করে সিটির বড় জয় নিশ্চিত করেন হুলিয়ান আলভারেস। মৌসুমের এই মহাগুরুত্তপূর্ণ সময়ে এটাও সিটির জন্য বিশাল এক পাওয়া। গত ৩১ জানুয়ারি বার্নলির বিপক্ষে ম্যাচে জোড়া গোলের পর এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে জালের দেখা পেলেন তিনি। কী মোক্ষম সময়েই না খরা কাটলো বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের।
গত সপ্তাহে বড় একটা ধাক্কা অবশ্য খেয়েছে সিটি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার-ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুই লেগের লড়াইয়ের পর তারা ছিটকে গেছে টাইব্রেকারে হেরে। তবে সেই হতাশা মুছে প্রথমে এফএ কাপে চেলসিকে হারিয়ে তারা জায়গা করে নেয় ফাইনালে আর এবার ব্রাইটনের বিপক্ষে উপহার দিল দাপুটে পারফরম্যান্স।
এখন দেখার বিষয়, আর্সেনাল কী করে। দলটির সমর্থকেরা আশা করতেই পারে, গত মৌসুমের মতো এবার আর হয়তো ভুল করবে না আর্সেনাল, বাজে কিছু করে ছিটকে যাবে না শিরোপা দৌড় থেকে। আগামী রোববার টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে তাদের লড়াইয়ে বিষয়টি আরও কিছুটা পরিষ্কার হবে।
তবে ঘুরেফিরে এখানে মূল আলোচ্য বিষয় হলো, শিরোপা যখন দৃষ্টিসীমায়, তখন সিটি কি তাদের কাজটা ভুলে যাবে? গত কয়েক মৌসুমে এই পর্যায়ে যে কাজটি তারা বারবার করেছে, সেটাই করতে গিয়ে এবার কি তারা পা হড়কাবে? উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হওয়ার আশাতেই নিশ্চয় ক্ষণ গুনছে আর্সেনাল, লিভারপুলও নয় কী! #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.