প্রাণের বর্ষবরণ উৎসবে মেতেছে আজ: স্বাগত ১৪২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বছর পরিক্রমায় আবার এলো বৈশাখ। আজ সূর্যদয়ের সাথে সাথে শুর্ব হয়েছে ১৪২৫। তাকে স্বাগত। নতুন বছরের শুর্বতে সারা দেশে আনন্দে মেতেছে মানুষ। ভোরে নতুন একটি সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুর্ব হয়েছে নানা স্থানে, নানা মাত্রায় বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য বর্ষবরণের উৎসব।
জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে আজ সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করল বাঙালি জাতি। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুর্ব মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসন ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
আজ নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। হালখাতা খুলবেন ব্যবসায়ীরা। নববর্ষ বরণে রাজশাহীসহ রাজধানী ও সারাদেশ একযোগে চলবে লোকজ ঐতিহ্যের নানা উৎসব অনুষ্ঠান। আজ সরকারী ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে নববর্ষের বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশন রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বির্বদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্বকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা, যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
সমাজের নানা ক্ষেত্রে এ দিবসের একটি প্রভাব ইতিমধ্যে উলেৱখযোগ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই উৎসব দেশের অর্থনীতির চলমানতাকে অনেকটা সমৃদ্ধ করে তুলছে। এই উৎসবে দেশের প্রায় সব স্তরের মানুষ দেশিয় পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী হওয়ায় তা গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে একেবারে শহুরে অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে।
আবহমান কাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। এক সময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনও বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। অদ্ভুত মুন্সিয়ানায় আলপনা আঁকেন মাটির মেঝেতে। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন সবাই। স্নান সারেন। নতুন পোশাক পরেন। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠা-পুলির আয়োজন। আজ হাটে-মাঠে-ঘাটে বসবে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। নানারকম কুটির শিল্প, খেলনা, মিষ্টিসহ বাহারি পণ্যে স্টল সাজানো হবে। বিভিন্ন এলাকায় থাকবে নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা কিংবা কুস্তির মতো ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
শুধু পোশাকে নয়, নববর্ষের দিন বিভিন্ন দেশিয় খাবারের আয়োজন করে থাকে নামীদামি হোটেল-রেস্তারাঁগুলোও। এতে ক্রেতাদের আগ্রহও কম নয়। সবকিছু মিলিয়ে পহেলা বৈশাখের এই উৎসব ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসব বাঙালির জাতিসত্তার উৎসব।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ একাত্মা হয়ে গাইবেÑ এসো, এসো, এসো হে বৈশাখৃ। আনন্দে উৎসবে মাতবে গোটা দেশ। কবিগুরুর ভাষায়Ñ নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনেৃ। একই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেনÑ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি করৃ। নবসৃষ্টির অগ্রদূত সুন্দরের অগ্রপথিক ও বিজয়কেতন। শুভ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৫। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.