বাগমারায় গণটিকা কার্যক্রম স্থগিত টিকা নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়


বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনায় গণটিকার কার্যক্রম আপাদত আজ বৃহস্পতিবার থেকে শেষ হয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকা দেয়া অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: গোলাম রাব্বানী নিজে সার্বক্ষনিক তদারকিতে মোবাইলে এসএমএস পরিচালনা করছেন। গণটিকার ১ম ডোজ গ্রহিতাদের ও নতুন করে টিকা প্রাপ্তিদের এসএমএস পাওয়ার ব্যক্তিদের টিকা নেয়ার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়। প্রতি দিন ১৫ শ’ জনকে টিকা দেয়া হচ্ছে।
এর আগে উৎসবমুখর পরিবেশে উপজেলার ১৭টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে টিকা নিতে এলাকার হাজারো মানুষের ঢল নেমে আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ১৭টি কেন্দ্রে দুই দফায় প্রতিটির জন্য ৬০০ করে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এতে ৩০ হাজার মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান করা হয়। গত ফ্রেবুয়ারী মাস হতে উপজেলা পর্যায়ে করোনা সংক্রমন হতে রক্ষা পেতে টিকা কার্যক্রম চালু হয়। প্রাথমিক ভাবে গ্রামের মানুষ প্রথম দিকে টিকা নিতে অনিহা ছিল। অনেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়ে বিরত ছিল।
উপজেলায় ৫ শতাধিক লোক করোনায় আক্রান্ত হয়। এতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়। উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রাগাছি গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।
দেশ ব্যাপী করোনার প্রার্দুভাবে সকলে যখন আতঙ্কিত। ঠিক তখন নারায়নগঞ্জ থেকে মাছের গাড়িতে এসে জাহাঙ্গীরের অসুস্থতায় এলাকাবাসী মধ্যে ভাইরাসের চরম শঙ্কা দেখা দেয়। সেই সময় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ওই রোগীকে তাঁর বাসায় আইসোলেশনে রেখে নিবিড় চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেন। এই থেকে শুরু বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভ্রাম্যমান চিকিৎসা সেবা। একই সাথে উপজেলার বালানগর গ্রামের ভারত ফেরত রোগী বাবলুর রহমান ৫ দিন ব্যাপী শর্য্যাসঙ্গী ছিল।
শয্যাসঙ্গী বিষয়টি উপজেলাস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: গোলাম রাব্বানী সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরে ভ্রাম্যমান চিকিৎসক নিয়ে হাজির হন। তাঁর পরিচর্যায় সেরে উঠেন বাবলুর রহমান।
এই ধারাবাহিকতায় বাগমারার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নির্দেশনায় বয়ে চলছে বাগমারা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিবিড় স্বাস্থ্য সেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে, করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত বাগমারার সাবেক সংসদ সদস্য আবু হেনা, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মখলেছুর রহমানসহ অন্তত: ১০ জন করোনায় সংক্রামিত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে ৫০ জনেরও বেশী লোক মারা গেছে।
তবে সাবেক সংসদ সদস্য আবু হেনা, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মখলেছুর রহমানসহ গুরুত্ব পূর্ণ লোক বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যাননি। এসব বেশী ভাগ মৃত্যুদের অধিকাংশ ঢাকা, রাজশাহীসহ বাইরে মারা গেছেন।
এছাড়া বাগমারায় এ মাসের প্রথম দিকে উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা সাদোপাড়া গ্রামের এনজিও কর্মী মুকুল হোসেন (৫৫) ও শ্রীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫) করোনা পজেটিভ নিয়ে মারা গেছেন। মৃত মুকুল হোসেন রংপুরে একটি বেসরকারী এনজিওতে চাকরী করতেন। একই ভাবে উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের রহিমা বেগম বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগছিলেন।
ঘটনার দিন সকাল বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসার দেয়ার প্রাককালে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু পর করোনা এ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তার পজেটিভ মিলে।
স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের সার্বক্ষণিক পর্যেবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সেরে উঠেছেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর উপজেলার বালানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম, ওমর আলীসহ বেশ কয়েকজন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা ও তাদের চিকিৎসা সেবায় আমরা করোনা সংক্রমন থেকে সুস্থ হয়েছি। তাঁরা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা চিকিৎসকের ব্যবহারে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই ভাবে আমাদের এ প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাসে পরপর দুইবার তাঁর শরীরে পজেটিভ আসে।
তিনি বাগমারা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনায় তিনি বাসায় আইসোলেশনে চিকিৎসা নিয়ে আল্লার ইচ্ছায় ভালো হয়েছেন। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাক্তারগণ সার্বক্ষনিক মোবাইলে তাঁর খোঁজ খবর নেয়ায় তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সকাল ৮টা থেকে লোক সমাগম হতে থাকছে। বেলা যতই বাড়ে লোক সমাগম ততই বাড়তে থাকে। এসএমএস ধারিরা টিকা পেয়ে তাঁরা খুশি হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম রাব্বানী জানান, সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক গণটিকায় প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে দুই দফায় ৬শত মানুষের মাঝে করোনা টিকা দেয়া হয়েছে।
আগামীতে সরকারী নির্দেশনায় চলমান টিকা কেন্দ্রে আবারো টিকা প্রদান করা হবে। টিকার কোন অভাব হবে না বলে তিনি জানান। এছাড়া প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.