শরণখোলায় মিলন বাহিনী’র তান্ডবে গ্রাম ছাড়া কয়েকটি পরিবার 

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের শরণখোলায় আট জন মিলে তৈরী করেছে একটি বাহিনী। এদের অত্যাচারে মানুষ দিশেহারার অভিযোগ। অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রাম ছেড়ে। আট সদস্যর  মধ্যে পাঁচজনই হচ্ছে আপন সহদর।

এ বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে মিলন। ভাইদের মধ্যে অন্যরা হলো নহরুল (৪২), মনির (৪০), ছগির (৪৭) ও নজরুল (৪৫)। এদের সবার বাড়ি উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে।

সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে মিলন বাহিনীর অত্যাচারের নানা কাহিনী বর্ননা করেন এলাকাবাসী।

প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী ফাতিমা বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, স্বামী প্রবাসে থাকায় তার ১২ বিঘা জমি জবর দখল করে নেয় মিলন বাহিনী। তার ছেলে মুসা (৮) রাস্তায় বের হলেই ভয় দেখায় ফলে দুই বছর ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ। অবশেষে ছেলেকে বাঁচাতে ১০ কিঃমিঃ দুর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় বোনের বাড়ীত রাখতে হচ্ছে।

এছাড়া গত ১২ মে তার কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল সেট, স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায় মিলন বাহীনি। এ বিষয় তিনি মামলা করলে তা প্রত্যাহারের জন্য নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া রাতে ধারালা অস্ত্র নিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে ভয় দেখায়। যার কারণে তিনি রাতে ঘুমাত পারেন না।

দেলোয়ার হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম (৫৮) বলেন, মিলন বাহিনীর সদস্যরা তাকে মারধর করে তার ৪টি দাঁত ভেঙ্গে দেয়। এসময় তারা হাঁস মুরগী ও দুটি গরু নিয়া যায়। তাদের ভয়ে এখন রাতে বাড়ীতে থাকেন না।

পাশের তালাবদ্ধ একটি বসত ঘর দেখিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘরে থাকা তার ভাই হাফেজ হাওলাদারের ছেলে শহিদুলের স্ত্রী সুখীর উপরও মিলন বাহিনীর কু-নজর পরে। এরপর মানসম্মান ও প্রানের ভয় এলাকা ছেড়ে চলে যায় তারা।

গ্রাম ছাড়া ইউনুচের স্ত্রী হাসিনা বেগম মোবাইল ফোনে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন , রাতে ঘরর বাহিরে বের হলে মিলন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় মামলা দিলে তার স্বামী ইউনুচকে মারপিট করে তারা।

অশীতিপর বৃদ্ধ আইউব আলী আকন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তার একটি গরু মিলনের বাড়ীত ঢুকে পড়ে। এ অপরাধে তাকে টেনে হিচড়ে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ওই সময় মিলনের হাতে পায়ে ধরে প্রাণ রক্ষা পান তিনি।

স্থানীয় যুবক বেল্লাল, জাহিদ, জাহাঙ্গীর সহ অনেকে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক গ্রাম পুলিশ সামাদ হাওলাদারের আট ছেলের মধ্যে মিলন, নহরুল, মনির, ছগির ও নজরুল মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, জমি দখল, ছিনতাই, নিরিহ মানুষদের মারধর সহ নানা অপরাধ করে চলছে। এলাকার কোন নতুন বউয়ের আগমন হলে  তাদের কু-নজর পড়ে। তাদের বাধা দিলে মারপিট করে এলাকা ছাড়া করা হয়।

মিলনের প্রতিবেশী বৃদ্ধ মালক হাওলাদার ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মেঝ ছেলে বিয়ে করলে তার স্ত্রীর উপর মিলনের কু-নজর পড়ে। এ কারণে বউকে চট্টগ্রাম ছেলের কাছে পাঠাতে বাধ্য হই। এতে ক্ষিপ্ত হয় আমাদের কাছে থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সুমন তালুকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন , মিলন বাহিনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কিছু নেতার ছত্র ছায়ায় থেক দীর্ঘদিন ধর মাদক ব্যবসা, নিরীহ মানুষক মারধর, গহবধু ধর্ষণ, চাদাবাজী, জমি দখল করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মারধর করে এলাকা ছাড়া করে তারা।

এব্যাপার ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাঃ মাঈনুল ইসলাম টিপু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ওই বাহিনীটি এলাকায় চাঁদাবাজী, মাদক ব্যাবসাসহ এমন কোন অপরাধ মূলক কাজ নেই যা তারা করেনি। তাদের কারনে এলাকার নারীরা ঘরে থাকতে পারে না। বিষয়টি আমি অনেকবার পুলিশকে জানিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয় না। কোন এক অদৃশ্য শক্তির জোরে পার পেয়ে যায় তারা।

এ ব্যাপার মিলন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে সাথে কথা বলতে রাজি হননি। মিলনের ভাই নহারুল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ থাকায় তারা বিভিন্ন  অপপ্রচার চালাচ্ছে।

শরণখোলা থানার অফিসার ইন চার্জ এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ওই এলাকায় দুইটি গ্রুপিং রয়েছে। তাছাড়া তাদের মধ্য দীর্ঘদিন ধরে জমি বিরোধ ও মামলা চলে আসছে। তাই বড় কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে নিয়ে একটি বৈঠক করে সমোঝতার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.