হঠাৎ এক সপ্তাহের তাপদাহে পুড়ছে জয়পুরহাট, বিপর্যস্ত জনজীবন

জয়পুরহাট প্রতিনিধি: হঠাৎ এক সপ্তাহের অব্যহত তীব্র তাপমাত্রায় আগুন জ্বলছে জয়পুরহাটসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গুলো। বৈশাখের শুরুতেই জয়পুরহাটের ওপর দিয়ে হালকা থেকে তীব্র ধরনের তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে।
প্রায় সপ্তাহ ধরে উত্তরবঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৪৩ থেকে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বলে জানিয়েছেন পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার আবহাওয়া অফিস। প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। তপ্ত মাটি ভিঁজে যাওয়ার মতো এক পশলা বৃষ্টির দিকে মানুষ আকাশের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে।
ভ্যাপসা গরমের মানুষের সাধারণ কার্যক্রম স্তবির হয়ে পড়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় বর্তমানে ইরি-বোরো ধান কাটার সময়। কৃষকেরা তীব্র তাপদাহের কারণে ধান কাটা শুরু করতে পারছে না। পাশাপাশি ভ্যান ও রিক্সা চালক একটু দুপুর হলেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ফলে দুপুরের আগেই উপজেলার শহরের সকল রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ছে। মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছে। সূর্যতাপে যেন শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে মানুষ যখন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না সেখানেও আছে বিপত্তি। বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। এমন প্রচণ্ড রৌদ্রের তাপমাত্রায় কৃষি জমি গুলোতেই থাকছে না পানি ফলে কৃষি জমিতে লাগানো ধানসহ বিভিন্ন ফসল গুলো পুড়ে যাচ্ছে।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা তীব্র তাপদাহের কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসছেন আবার কেউ কেউ ভর্তিও হচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগী শিশু ও বৃদ্ধ।
সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যাটারি চালিত অটো-রিকশা ভ্যান চালক ওমর ফারুক (৪৫) বলেন, আমি ভোর ৬ টায় বাজারে আসি তীব্র তাপদাহ ও যাত্রী কম থাকায় দুপুর ১২ আগে যাই, আবার বৈকেল ৪টায় এসে রাত্রি ৮টায় বাড়িতে ফিরে যাই। আগে দিনে ৮শ থেকে ৯শ টাকা ভ্যান চালিয়ে আয় হতো কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আমার দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
পৌর শহরের ব্যাটারি চালিত অটো-রিকশা চালক রিপন হোসেন (৩৫) বলেন, আগের মতো আর ভাড়া নেই। দুপুর না হতে বাড়ি ফিরে যাই আর বৈকেলে আসি। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।
এদিকে এমন গরম থেকে রক্ষা পেতে জেলার বিভিন্ন গ্রামে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট একটু বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এবং অন্য ধর্মের মানুষেরা তাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এমন গরম থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনা করতেও দেখা গেছে।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়্যারলেস সুপারভাইজার প্রদীপ কান্তি রায় মুঠোফোনে জানান, উত্তরবঙ্গ এলাকায় এই সপ্তাহে সর্বাচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়েছে। যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর জয়পুরহাট প্রতিনিধি নিরেন দাস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.