কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মিনিট। এই সামান্য সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো প্রথম দিনের শুনানি। না, ভোটে জিতেই দল বদলানো মুকুল রায়ের বিধায়ক পদের বৈধতা-বিতর্কের কোনও ফয়সালাই হলো না এদিন। অগত্যা, প্রতিকার চাইতে বিজেপি এবারে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিধানসভায় অবশ্য পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৩০ জুলাই বলে জানানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিধানসভা ভবনে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের মূল দাবিদার বিজেপি নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন অধ্যক্ষের সামনে হাজির হন বেলা দু’টোর পরে। সঙ্গে দু’জন বিজেপি বিধায়ক–পুরুলিয়ার সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং কালনার অম্বিকা রায়। অধ্যক্ষের ঘরে তাঁদের প্রবেশ এবং বেরিয়ে আসার মধ্যে ব্যবধান বড়জোর ৪ মিনিট। কী শুনানি হলো এর মধ্যে ? মন্তব্যে নারাজ শুভেন্দু। জানা গেল, আরও কিছু নথিপত্র চেয়েছেন অধ্যক্ষ। সেগুলো জমা পড়লে পরের শুনানি আগামী ৩০ জুলাই। বিজেপি সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, এর আগে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সহ মোট ৬৪ পাতার নথি বিধানসভায় জমা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে কার্যত জেদ ধরে বসে আছেন বিরোধী দলনেতা, সেই মুকুল রায়কে অবশ্য দেখা যায়নি শুক্রবারের সংক্ষিপ্ত শুনানি পর্বে।
২০১৭তে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন মুকুল রায়। দক্ষ সংগঠকের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০তে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, বিজেপিতে আগাগোড়াই তিনি কখনও অতিসক্রিয়, কখনও বা একেবারেই নিস্ক্রিয়। অবাক করা অতিঠান্ডা আচরণ। দৃষ্টিকটূ উদাসীনতা। সবেতেই যেন নির্বিকার! তবে কখন কাকে কোন কাজে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে কিংবা কখন কার থেকে দূরে সরে যেতে হবে, সেই ব্যাপারে তাঁর অসাধারণ পারদর্শীতা কিন্তু সত্যিই নজর কাড়ার মতো। যদিও ভদ্রতা এবং ব্যবহারের আন্তরিকতায় কিন্তু কোনও ঘাটতি নেই মুকুল রায়ের। জনতার ভোটে জীবনে প্রথম নির্বাচনে জয়ের স্বাদ তিনি পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী হিসেবেই। সদ্য ফেলে আসা বিধানসভা ভোটে, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে। কিন্তু ২মে ফলপ্রকাশের পরেই তাঁর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সকলকে অবাক করে দিয়ে ১১ জুন সপুত্র তিনি ফিরে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলেই। এই প্রসঙ্গে যে কথাটা না বললেই নয়,ক্ষমাপরায়ণতাই ভারতীয় রাজনীতিতে এক স্বতন্ত্র মাত্রা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই লাভলোকসানের হিসেব না করেই তিনি হাসিমুখে স্বাগত জানান অনেককেই। বড় জায়গাও ভাবা হয় তাঁদের জন্য।
মুকুলবাবু কিন্তু তৃণমূলে যোগ দিয়েও বিধানসভায় বসছেন বিজেপির আসনেই। বিজেপির তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানের পদটি পেয়েছেন তিনিই। প্রতিবাদে বিধানসভার ৮টি কমিটির শীর্ষপদ প্রত্যাখ্যান করে রাজ্যপালের কাছে প্রতিকার দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারীরা। প্রশ্ন তুলেছেন নৈতিকতা নিয়ে। এই নৈতিকতার প্রশ্নেই নাকি মুকুলের অনেক ঘনিষ্ঠ অনুগামী তাঁর এভাবে দলবদল মেনে নিতে পারেননি। অনুসরণও করেননি তাঁকে।
এবারে মুকুল রায়কে আরও চাপে ফেলতে চান রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ শুভেন্দু। আজ শুক্রবারই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, বাংলায় রাজ্যসভার একটিমাত্র শূন্য আসনে নির্বাচন হবে ৯ আগস্ট। সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় রাজ্যসভার আসনটি শূণ্য হয়। বিজেপি খুব ভালো ভাবেই জানে, বিধানসভায় শক্তির বিচারে রাজ্যসভায় তাঁদের প্রার্থী দেওয়া অর্থহীন। জয়ের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। তবুও তাঁরা প্রার্থী দিতে পারেন শুধুমাত্র মুকুল রায়কে আরও চাপে ফেলতে। দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য বিজেপি যদি ‘ওয়ান লাইন’, ‘ টু লাইন’ বা ‘থ্রি লাইন’ হুইপ জারি করে, তবে স্পষ্ট হয়ে যাবে মুকুল রায়ের ভূমিকা। হুইপ অমান্য করলে দলত্যাগ বিরোধী আইন তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয় কিনা সেটাও দেখা যাবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.