বাইডেনের সময় আরও ঘনিষ্ঠ হবে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক!

(বাইডেনের সময় আরও ঘনিষ্ঠ হবে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক!–ছবি: সংগৃহীত)
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ইস্যুতে যে অবস্থান ও মনোভাব দেখিয়ে গেছেন তা বিরল। তিনি পূর্বসূরিদের নীতি থেকে সরে রাশিয়াকে অনেকটাই চাপমুক্ত রেখেছিলেন।
অন্যদিকে দায়িত্ব গ্রহণের পরপর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারও রাশিয়া ও চীনকে চাপে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রতি এক দশক পর পর কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিগুলো বদলে যায়। নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ে। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদের চার বছরে বিশ্ব কূটনীতির ধারা বদলে দিয়ে গেছেন। যে কারণে তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
এই চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীনের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব নতুন কিছু নয়। বাইডেন প্রশাসনের কঠোর নীতি দেশ দুটিকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারী প্রথমবারের মতো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পরিদর্শনে গিয়ে জো বাইডেন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি রাশিয়া ও চীনকে সতর্কবার্তা দেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মঞ্চে আবারও ফিরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি যে, রাশিয়ার আগ্রাসী পদক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, মার্কিন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা এবং নিজের নাগরিকের ওপর বিষ প্রয়োগের দিন শেষ হয়ে গেছে। যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব বিষয়ে রাশিয়াকে দোষারোপ করতে নারাজ ছিলেন।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথমদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা, হংকংয়ে দমন-পীড়ন, দক্ষিণ-চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী ভূমিকায় দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। চীন যখন বিশ্ব জুড়ে তাদের সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে তখনই দায়িত্ব নিয়েছেন বাইডেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভবত চীনই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ। ভাষণে বাইডেন বলেন, চীন আমাদের সবচেয়ে ভয়ানক প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের আগ্রাসনের জবাব দেব। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে চাপ দেব। তবে আমেরিকার স্বার্থে আমরা চীনের সঙ্গে কাজ করতেও প্রস্তুত রয়েছি।
গত বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন জো বাইডেন। আলাপকালে বাইডেন অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি শিনজিয়াংয়ে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, হংকংয়ের ওপর চীনের দমন-পীড়ন এবং তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের চলমান উত্তেজনা নিয়েও কথা বলেন।
অন্যদিকে আলাপকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সতর্ক করে বলেছেন, সংঘাত আর খারাপ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই বিপর্যয় বয়ে আনবে। দুই পক্ষেরই ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে চলা দরকার।
বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর এরই মধ্যে তাইওয়ান প্রণালিতে নোঙর ফেলেছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েনের উদ্যোগ এসেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউএসএস ওহিও নামের সাবমেরিনটি সম্ভবত প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে ভয়ংকর উপস্থিতি।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার জন্য নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ রয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়াকে তাদের মূল কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরে। মার্কিন ন্যাশনাল ডিফেন্স স্ট্রাটেজি সতর্ক করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে দুই ফ্রন্টের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ করতে হতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, পশ্চিমাদের জন্য চীন ও রাশিয়া যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় নতুন মার্কিন শিগিগরই ট্রান্স-আটলান্টিক সংলাপ শুরু করবেন। ন্যাটো ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা আগের মতো চীন এবং সিনো-রাশিয়ার সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। চীনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব ঠেকাতে বাইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছেন।
যদিও বাইডেনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জটিল হয়ে পড়েছে। তার ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাইকে অবাক করে চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। চীন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইইউ’কে স্বাধীন ও সার্বভৌমভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, নিজেদের স্বার্থে স্বাধীনভাবে কাজ করা গেলে বড় কিছু অর্জন সম্ভব। চীন-ইইউ কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট তারই একটি ভালো উদাহরণ। ইউরোপের দেশগুলোও এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দ্বন্দ্বে তারা কোনো পক্ষ নেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছাড়াও রাশিয়ার বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মস্কো-বেইজিং সুসম্পর্কের জন্য বড় কারণ হবে। কারণ রাশিয়া চীনকে তাদের সরকারি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে হুমকি মনে করে না।
আবার চীনের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়া হুমকি নয়। তাই বাইডেন প্রশাসনের চীন ও রাশিয়াবিরোধী নীতি দেশ দুটোকে আরো কাছে আনবে। পশ্চিমা দেশের অনেক নীতিনির্ধারক এবং ভাষ্যকরদের মতে, সিনো-রাশিয়ান সম্পর্ক দেশ দুটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণেই ভিত্তি পেয়েছে। একই সঙ্গে ইউরোপে সাবেক মিত্রদেরও সহযোগিতা হারানোর ঝুঁকি বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.