“মানবাধিকার সংগঠনের কথিত নেতাদের ধান্দাবাজী” অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা নিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব উপা শিখা চাকমা!

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কিছু কিছু মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। এসব তথাকথিত সংগঠনের কাছে দ্বারস্থ হয়ে অনেকেই হচ্ছে সর্বশান্ত, কেউ হচ্ছেন নিঃস্ব আবার কেউ হচ্ছেন নামসর্বস্ব উপকৃত। এ নিয়ে চলছে নানা তর্ক বির্তক। রয়েছেও নানা মন্তব্য। তবে কিছু সংগঠন ঠিক থাকলেও দায়ীত্বরতরা কিন্তু ঠিক নেই, আবার মানুষ ঠিক থাকলেও সংগঠন ঠিক নেই।

সারাদেশে মানবাধিকার সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মী নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা, তর্ক বিতর্ক। আবার কিছু মানবাধিকার কর্মী নিজের সবকিছু উজার করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে, অনেকে সুযোগ বুঝে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব নিয়ে সর্বশান্তও করছে।
এরকম একটি নাটকের দৃশ্যকেও হার মানিয়ে দৃশ্যমান প্রতারনার শিকার হয়েছে চট্টগ্রামের উপা শিখা চাকমা নামের একজন সহজ সরল নারী। এ নারী (উপা শিখা চাকমা) ধরাশায়ী হয়েছেে যাদের কাছে তাদের হাতে আইন, পুলিশ, কোর্ট, থানা, জেলখানাসহ সবকিছুই তাদের কাছে মামুলি ব্যাপার রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলতে গেলে কিছু নেই যেন। যাদুর খেলার মতো তাদের চোখের ইশারায় যেন সব কিছুই চলে। মামলা – হামলা, থানা- পুলিশ ওদের কাছেই কিছুই না সব মামুলি ব্যাপার মাত্র। এরা যেন সব কিছু জেনে বুঝেই করে। ঘটনার বিবরণ- ঘটনাটি উপা চাকমাকে নিয়ে।
উপা শিখা চাকমা হলেন পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। মন্দিরা বিউটি পার্লার এর সত্বাধিকারী। এক মেয়ে ও স্বামী নিয়ে চলছে তার সুখের সংসার। স্বামী শৈলেন চন্দ্র মন্ডল গার্মেন্টস চাকুরীজীবী। তাদের একমাত্র মেয়ে মন্দিরা মন্ডল আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
উপা শিখা চাকমা ও শৈলেন চন্দ্র মন্ডলের সংসার – দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই চলছিল। তাদের সুখময় দাম্পত্য জীবনের বিষফোড়া হয়ে আগমন করেছে রুপনা বড়ুয়া নামে এক নারী। শৈলেন চন্দ্র মন্ডল একজন গার্মেন্টস চাকুরীজীবী হলেও তিনি একজন সংগীত শিল্পীও। রুপনা বড়ুয়ার মেয়ে ও শৈলেন চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে এবং রুপনা বড়ুয়ার মেয়েকে সংগীত শিখানোর কারণে বেশ সহজ হয়ে ওঠে দুজনের সখ্যতা – বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে।
এ সুযোগে জড়িয়ে পড়ে শৈলেন চন্দ্র মন্ডল ও রুপনা বড়ুয়া পরকীয়া প্রেমে। রুপনা বড়ুয়া একজন সেবিকা। নার্স হিসেবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চাকুরী করে। শৈলেন চন্দ্র মন্ডল ও রুপনা বড়ুয়ার সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি উপা শিখা চাকমার চোখে ধরা পরে গত ২০২২ সালের দিকে। স্বামী শৈলেন চন্দ্র মন্ডলকে স্ত্রী উপা শিখা চাকমা রুপনা বড়ুয়ার সম্পর্ক নিয়ে কথা তুললেই শুরু হয় তাদের দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়ন। প্রায় সময়ে এ নিয়ে শৈলেন চন্দ্র মন্ডল ও উপা শিখা চাকমার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলতো। অনেক সময়ে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারামারি ও হাতাহাতি চলতো।
উপা শিখা চাকমা স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে দাম্পত্য জীবন সুখে শান্তিতে কাটাতে এবং স্বামীকে রুপনা বড়ুয়ার পরকীয়ার আসক্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে ঘরের কাজের ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ জাহাঙ্গীর মিস্ত্রির মাধ্যমে আইন সহায়তা কেন্দ্র ( আসক) ফাউন্ডেশনে যাওয়া। এ থেকে শুরু হয় উপা শিখা চাকমার জীবনে নতুন এক যাত্রা।
জাহাঙ্গীরের পরামর্শে আসক ফাউন্ডেশনে যাওয়া উপা শিখা চাকমার। নিজের স্বামীকে নিজের কাছে ফিরে পেয়ে যেন সুখের সংসারে ফিরতে পারেন তার জন্য আসক ফাউন্ডেশনের কাছে যাওয়া। ওদের কথা মতো নগরের আমবাগান অফিসে গিয়ে স্বামী শৈলেন চন্দ্র মন্ডল ও রুপনা বড়ুয়ার পরকীয়া সম্পর্ক সমাধানের জন্য আবেদন করা হয় পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। এর পর থেকে শুরু উপা শিখা চাকমার জীবনে নতুন কিছু ঘটনার।
এতে শুরু হয় উপা শিখা চাকমার জীবন নিয়ে, নানান বিষয়ে আসক ফাউন্ডেশনের চল-চাতুরী। একজন সহজ সরল নারী হিসেবে পেয়ে আসক ফাউন্ডেশনের হর্তাকর্তা নেতারা নানানভাবে ফুসলিয়ে হাতিয়ে নিতে থাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা। বৈঠকে বসতে হবে এবং সমাধান করে দেওয়া হবে বলে প্রথম তারা উপা শিখা চাকমা থেকে হাতিয়ে নেয় ৫৫ হাজার টাকা। এভাবেই নানানভাবে দাপে দাপে জালাল, হানিফ এবং পরবর্তীতে এহসানসহ মিলে উপা শিখা চাকমা থেকে হাতিয়ে নেয় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। কাজের কাজ কোন কিছু না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে ঘটনার মোর ঘুরে যায়।
এসব মানবাধিকার কর্মীরা একপর্যায়ে উপা শিখা চাকমার টাকা ফেরতের চাপ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কৌশল করে গত ২০২২ সালের ২৫ জুন মেয়ে মন্দিরা মন্ডলকে স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করতে চায়। অপহরণের সময়ে মেয়ের আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায় কৌশলে।
পরবর্তীতে এ নিয়ে উপা শিখা চাকমা ২০২২ সালের ১৮ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং -৬, চট্টগ্রাম আদালতে জাহাঙ্গীর, হানিফ ও নুর নাহার বেগমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন। মামলা নং ১৬৯/২০২২। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের নির্দোষ উল্লেখ করে প্রতিবেদন পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক ( নি:) মো : নিজাম উদ্দিন দাখিল করেন।
বাদী উপা শিখা চাকমা এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে আদালত মামলাটি পূনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন মহানগর গোয়েন্দা ( বন্দর) বিভাগ, সিএমপি, চট্টগ্রামকে। পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট মহানগর গোয়েন্দা ( বন্দর) বিভাগ, সিএমপি, চট্টগ্রাম এর পুলিশ পরিদর্শক ( নিরস্ত্র) মো : মোক্তার হোসেন।
পরবর্তীতে আসামিরা দোষী প্রমাণিত হলে আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না মনজুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এখানে থেমে নেই আসামি মানবাধিকার নেতারা। নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে বাদী ও অসহায় নারী উপা শিখা চাকমাকে। এছাড়াও উপা শিখা চাকমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে উপা শিখা চাকমা নিজের ও মেয়ের নিরাপত্তা চেয়ে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর বন্দর থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। ডায়রি নং ১৪১২। এছাড়াও পরবর্তীতে কোতোয়ালি থানায়ও সাধারণ ডায়রি করেন ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর। ডায়রি নং ৩১৬৭। এরপর হানিফ ও জালালের সহযোগী এহসান এ সাধারণ ডায়রিগুলো পুলিশ দিয়ে আসামিদের ওয়ারেন্ট করে দেওয়ার নাম দিয়ে ৪৫০০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এদিকে গতকাল ২৭ এপ্রিল এহসানের বিরুদ্ধে সিএমপির ডবলমুরিং থানায় আরেক টি সাধারণ ডায়রি করেছেন উপা শিখা চাকমা। ডায়রি নং -১৫৫৪।
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নেতা মো: শাহ জালালের মুঠোফোন ০১৮১৯৪৬৭৭৯৫ এ জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরে গালাগালি করে ফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এছাড়াও এহসানের মুঠোফোন ০১৬৩৮৫৫৯৫৯৩ ও রুপনা বড়ুয়ার মুঠোফোন ০১৮১৮ ৯৯১১৭৬ এ বারবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায় নি বলে কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
এদিকে এ নিয়ে আইন সহায়তা কেন্দ্র ( আসক) ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মিসেস নাজমুন নাহারের মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন চট্টগ্রামে আমাদের কোন কমিটি নেই। শাহ জালাল আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন সে আমার কমিটিতে নেই। তবে আমার কমিটির কোন লোক আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কোন অন্যায় ও অনিয়ম করলে এর দায়ভার আমরা নেব না। আমরাও এর প্রতিবাদ করবো।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্হ নারী উপা শিখা চাকমা বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা আছেন। অপরাধী চক্র ও মানবাধিকার নেতারা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। তিনি উর্ধতন প্রশাসনের আশু হস্হক্ষেপ কামনা করেন। উপা শিখা চাকমা আরও বলেন, অপরাধীরা বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে যেন মামলা তুলে নেওয়া হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান স. . জিয়াউর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.