নেপালে ধর্ষণ আইন সংস্কারের জোর দাবি

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এক নারী আট বছর আগে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করে দোষীদের বিচার চেয়েছেন ৷ কিন্তু নেপালের প্রচলিত আইনে এখন আর তা সম্ভব নয় ৷ তাই আইন সংস্কারের জোর দাবি সব মহল থেকে ৷
সাবেক শিশু শিল্পী এবং মডেলের অভিযোগ, আট বছর আগে এক সুন্দরী প্রতিযোগীতার আয়োজকরা মাদক সেবন করিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে তা দিয়ে পরে ব্ল্যাকমেইলও করে৷ সেই সময়ের ষোড়শী এখন ২৪ বছরের পরিপূর্ণ নারী ৷ এখন তিনি চান সুবিচার ৷ ধর্ষণের অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু নেপালের আইনে ধর্ষণের ঘটনার এক বছরের মধ্যে অভিযোগ জানাতে হয়, এক বছর পেরিয়ে গেলে কার্যত ধর্ষণের অভিযোগ তোলার সুযোগই থাকে না৷ তাই ওই মডেল বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ আমলে না নিয়ে কথিত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে স্রেফ মানব পাচার এবং অপহরণের মামলা নিয়েছে ৷
আইন সংস্কার করার জোরালো দাবি
২৪ বছর বয়সী মডেল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানানোর পর নেপাল জুড়ে উঠেছে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কার করে ধর্ষকদের দ্রুত শাস্তি দেয়ার দাবি ৷ দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশের মতো নেপালেও ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুদের বিচার প্রাপ্তির হার খুব নগণ্য৷ ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার সামান্যই প্রকাশিত হয়, মামলা হয় আরো কম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট মামলার অন্তত দুই তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই অপরাধীর কোনো শাস্তি হয় না ৷
এই পরিস্থিতি বদলাতে প্রথমে যুগোপযোগী আইন চান নেপালের নারী অধিকার কর্মীরা ৷ নারী অধিকার কর্মী মোহনা আনসারি ডয়চে ভেলেকে বলেন, এখনো সমাজ যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে সব নারীর পক্ষে খুব তাড়াতাড়ি অভিযোগ উত্থাপন করার মতো মনের জোর এবং সংশ্লিষ্টদের অনেকের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা না পাওয়া স্বাভাবিক৷ তাই এক বছরের পরও যাতে অভিযোগ করা যায় এবং সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, তেমন আইন করতে হবে ৷
তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার অনেক নারীই প্রকৃত ঘটনা সবাইকে জানাতে সংকোচ বোধ করেন ৷ সমাজে ধর্ষিতাকেই ধর্ষণের জন্য দায়ী করার প্রবণতা, নিরাপত্তার অভাব এবং সহমর্মিতার অভাব ইত্যাদি কারণে ঘটনাটির কথা সবাইকে জানাতে পারেন না অনেকে ৷ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নেপাল সরকারের প্রতি ধর্ষণের আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা দাবি জানায় ৷
গত সপ্তাহে নেপালের নারী আইনজীবীরাও ধর্ষণ আইন থেকে এক বছরের শর্ত সরিয়ে নেয়ার দাবি তোলেন ৷ সুপ্রিম কোর্টকে তারা বলেন, এক বছরের মধ্যে অভিযোগ করতে হবে, দেরি হলে ধর্ষণের অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকবে না- এমন বিধান বাতিল করতে হবে, কারণ, এর মাধ্যমে নারী এবং শিশুদের সুবিচার প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ৷
সরকারি দলেও একই দাবি
ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কারের দাবি আগেও উঠেছে নেপালে৷ সরকার কখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি ৷ তবে এবার সরকারের ওপর চাপ অনেক প্রবল ৷
নেপালের সংসদের স্পিকার অগ্নি সাপকোটা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার প্রতি যৌন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ৷
ক্ষমতাসীন নেপাল কংগ্রেস পার্টির সাংসদ গগন থাপা বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনা এক বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযোগ দায়েরের সুযোগ করে দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ৷ সর্বস্তরের দাবির মুখে সরকারও ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কারের কথা ভাবছে বলে জানা গেছে ৷
নেপালের আইন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফদিন্দ্র গৌতম ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য কর্তৃপক্ষ এখন আইনটি পরীক্ষা করে দেখছে ৷ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.