নাটোরে-০৪ আসনে আওয়ামীলীগের কোন্দল চরমে

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর- ৪ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সাথে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের বিরোধ চরমে উঠেছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাবেক এই মন্ত্রী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের মতামত না নিয়ে তার বিশ্বস্ত লোকদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবী করেন নেতাকর্মীরা। ফলে উপজেলা দুটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এমনকি দুটি উপজেলাতেই অভ্যন্তরীন দ্বন্ধের কারণে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া দলীয় কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের বাধা সৃস্টির অভিযোগও রয়েছে এমপির বিরুদ্ধে।

গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহ নেওয়াজ আলী মোল্লা অভিযোগ করেন, এমপি কুদ্দুস স্বজন সকল স্কুল ও কলেজগুলোতে তাঁর আত্মীয় স্বজনকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নাইট গার্ড থেকে সকল প্রকার নিয়োগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দলীয় ত্যাগী নেতা কর্মিদের মূল্যায়ন করা হয়নি। একারণে আওয়ামীলীগ ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে গুরুদাসপুর এলাকায় অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে দলীয় বাধার মুখে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস সরকারী কর্মসূচী ছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে কোন সভা সমাবেশ করতে পারেননি। দলীয় বিরোধের জের ধরে এমপি কুদ্দুসের নির্দেশে পুলিশ তাদের ওপর গুলি ও লাঠি পেটা করে। এঘটনায় মেয়রসহ কয়েকজন দলীয় কর্মি আহত হন। শুধু তাই নয় তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছিল।

বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, এমপি কুদ্দুস তাকে প্রতিপক্ষ মনে করে। সম্প্রতি এমপি আব্দুল কুদ্দুসের নির্দেশে তার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে অভিযোগ এনে উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার মানিকপুর বাজার এলাকায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত পবিত্র ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙ্গানো ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি’র সমর্থকরা ভেঙ্গে ফেলেছে এমন সংবাদ শুনে তিনি তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে রবিবার দুপুরে উপজেলার মানিকপুর বাজার এলাকায় পরির্দশনে যান। সেখানে তার সাটানো বিলবোর্ড ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সেখানেই বক্তৃতা করছিলেন। এসময় সাংসদের সমর্থক ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুল ইসলাম এবং রুবেল নামে দুই সমর্থক তাকে মারপিট ও লাঞ্চিত করার জন্য লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন। এসময় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার ও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারি আরো জানান, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় স্থানীয় এমপি তার ক্যাডার দিয়ে তাকে সব জায়গায় বাধা প্রদান ও তার উপর হামলার চেষ্টা করছেন। এমপি’র জনপ্রিয়তা কম থাকায় তিনি তার উপর ইর্ষান্বিত হয়েই এমন কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর অধিকার সবার আছে। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনি তার হয়েই কাজ করবেন। তবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

এব্যাপারে এমপি’র সমর্থক স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে (০১৭৪১০৭০২৬৮) বার বার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে হামলা চেষ্টাকারী রুবেল জানান, এমপির বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ব বক্তব্য দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

এবিষয়ে গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম ৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি’ বলেন, সংসদ চলাকালিন সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে তিনি এলাকায় ফিরেছেন কোথায় কি ঘটেছে বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি আরও জানান, দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরোধ থাকতেই পারে। তবে আসলে এলাকার ভোটাররা যা চায় সেটাই হয়। এ আসনটিতে তার বিরুদ্ধে প্রতিবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নেতা-কর্মীরা বিরুদ্ধাচারণ করার পরেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত হন এবং তিনি বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ আসন আওয়ামীলীগের দখলেই থাকবে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.