অন্যদিকে দৌড়ে লাভ নেই, সময় শেষ : সরকারকে মির্জা ফখরুল

ঢাকা প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, অন্যদিকে দৌড়ে কোনো লাভ নেই। সময় শেষ, বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এখনো সময় আছে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এখনো জনগণের দাবি মেনে নিন, পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার নির্বাচিত করুন। এটাই এখন সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার (০৩ জুন) বিকালে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় সাজা প্রদানের প্রতিবাদে’ এ সমাবেশ হয়। এতে প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে জনগণের আন্দোলন দমানো যাবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এভাবেই নেতাদের কারাগারে রেখে নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি। কারণ মানুষ জেগে উঠেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার বাজেটের নামে দেশের জনগণের সঙ্গে মশকরা করেছে। এটা গরিব মারার বাজেট। বাজেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, রিকশা শ্রমিক। এমনকি যে ভিক্ষা করছে তাকে পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ যাদের কর মওকুফের কথা বলা হয়েছে তাদেরও কর দিতে হবে। তাদেরও টিন নম্বর থাকতে হবে। এ হচ্ছে এই সরকারের অবস্থা।
তিনি বলেন, এ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বড় অর্থনীতিবিদরা সবাই বলছেন, এ বাজেট অর্থনৈতিক সংকটকে চিহ্নিত করতে পারেনি। সমাধানের কোনো পথ দেখাতে পারেনি। উপরন্তু সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি মর্যাদাকর নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের (সরকার) মাথা বেশ গরম হয়েছে। বিভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে ভিসানীতি নাকি তাদের কোনো সমস্যা না। যদি সমস্যা না হয় তাহলে এটা এলো কেন? কারণ এমন একটা ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করে দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলতে বাধ্য হচ্ছে, তোমরা যদি একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন না করতে পারো তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার মধ্যে রাজনীতিবিদ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থাও আছে। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের কাছে এ কথা পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই, আইনের শাসন নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। পালানোর পথ পাবে না আওয়ামী লীগ।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন এই সমাবেশ থেকে না হোক, ৪-৫ দিনের মধ্যে দলের মহাসচিব নিশ্চয়ই তা ঘোষণা দেবেন। প্রস্তুত থাকবেন। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সরকারকে বিদায় করবেন। সরকার মরণ কামড় দেবে টিকে থাকতে। আর আমরাও মরণ কামড় দেব তাদের বিদায় করতে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলন এবং নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতার ও জেলে পাঠানো হচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ নেই। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভোটচুরির বিরুদ্ধে। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র করতে হবে।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন-কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে: এর আগে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন চূড়ান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৭ নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার জীবনভিত্তিক বই মেলা ও চিত্র প্রদর্শনীর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন-দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম প্রমুখ। এর আগে বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির নেতারা জিয়াউর রহমানের জীবনী চিত্র পরিদর্শন করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.