সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে বাগাতিপাড়ার সাধারণ মানুষ, গ্রামের নাম সোনাপাতিল আর পেড়াবাড়িয়া

বিশেষ প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাশাপাশি দুটি গ্রাম । তবে নাম কিংবা ধ্বনি বা উচ্চারণ তার চেয়েও ভালো লাগলো এখানকার মানুষজন। গত ৫০ বছর ধরে এই গ্রাম দুটিতে হয়নি কোনো বড় ধরণের চুরি,ঘটেনি বড় ধরণের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা। হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি গলাগলি বাস করছে যুগযুগ ধরে ,কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে অটুট ।

ক্ষুধা-দারিদ্র,রোগ-শোক,কুশিক্ষা-কুসংস্কার এখানেই আছে দেশের আর দশটা এলাকার মতো ।রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক শোষণ -বঞ্চনা । রয়েছে মজুরির অতি নিম্নহার । মহাজনী ও জোতদারী প্রথা,সম্পদ সম্প্রসারণ কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বীজ পোঁতা নেই কোনো কৃষক বা মজুরের উঠানে । যে যার ধর্ম-কর্ম করছে ।

একজনের বিপদে-আপদে সাধ্যমতো এগিয়ে আসছে আরেকজন ।”সবার উপরে মানুষ সত্য” এরকম বড় কথা তারা যেমন জানেনা,তেমনি তারা আবার জানেনা জাতি ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলা । শান্তিপ্রিয় এ দুটি গ্রামে জন্ম নিয়েছে অর্ধ শতাধিক সুদ ব্যবসায়ীর ।। বাগাতিপাড়া উপজেলায় মাদকের মতই ভয়াবহ ক্ষতিকর রুপ নিয়েছে সমাজে দাদন (সুদের) ব্যাবসা। যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অভাবি পরিবারের সদস্যরা।

বিশেষ করে দিনমজুর, শ্রমিক,রিস্কা-ভ্যান চাক সহ সল্প আয়ের মানুষদের দুর্বলতার সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু দাদন (সুদখোর) ব্যাবসায়রা সাধারণ মানুষকে জিম্মিকরে ফাইদা লুটছে। অধিক হারে সুদ নিয়ে সাধারণ মানুষ পড়ছেন মহাবিপাকে।

সুদের টাকা নিয়ে নি:স্ব হচ্ছে মানুষ। অথচ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসছে না।দাদন ব্যবসায়ীদের সুদ কারবারের ফাঁদে পড়ে বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। দরিদ্রতার অসহায়ত্বের সুযোগে সাদা চেকে সইসহ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে জমির দলিল। চেকে ইচ্ছামত টাকার সংখ্যা বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানিসহ চলে নানাভাবে নির্যাতন।

সুদের জালে আটকে অনেকে হারিয়েছে বসত ভিটা, আবার অনেকে ছেড়েছেন এলাকা। সুদ কিংবা মহাজনী ব্যবসা সামাজিক নীপিড়নমুলক একটি অনৈতিক পন্থা। বহু পূর্ব হতে বিষ বৃক্ষের ন্যায় এই ব্যবস্থা শোষণের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে বাগাতিপাড়ার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে এই কারবার।

মহাজনদের কঠিন শর্তের বেড়াঁজালে আটকে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে তারা। পক্ষান্তরে টাকা দিয়ে টাকা বানিয়ে পুঁজিপতি শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েও কৌশলে আয়কর বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে এসব সুদখোররা। আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের নানা কুট কৌশলের কারনে সমাজের কোন পর্যায় থেকে এর বিরুদ্ধে “টু” শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না।

কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে বাগাতিপাড়ার সাধারন মানুষ যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যুগপোযোগী আইন করে এই প্রবনতা বন্ধ করা না গেলে নিকট ভবিষ্যতে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য দেখা দেবে। যা উপজেলার শ্রেনী বৈষম্যকে প্রকট করে তুলে চরম সামাজিক অস্থিতরতা সৃষ্টি করতে পারে।

যেখানে বর্তমানে ব্যাংক এ সুদের হার ৫%-৭% করে সেখানে এই সব সুদের ব্যবসাকারীরা ১২০%, বা কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী হারে সুদ নিচ্ছে। তাদের এই অতি সুদের লোভের কারনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বহু লোক। কেউ সুদ না দিতে পেরে পালিয়ে বেরাচ্ছে। কেউ বা হয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্ত। অন্যদিকে সুদের টাকা জোগাড় করতে কেউ জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধ মূলক কাজে।আসলসহ সুদের টাকা পরিশোধ করলেও রক্ষা পাচ্ছে না মামলা হামলা সহ মিথ্যা মামলা থেকে ।

অনেকে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন । অনেকে বসতভিটা বিক্রি করেছেন । অনেকে সুদ ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন এবং খাটছেন । অনেকের আদালতের দরজায় হাজিরা দিতে দিতে জীবন শেষ ।সমস্ত বাগাতিপাড়া উপজেলা জুড়েই সুদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদের তালিকায় উঠে এসেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে মুচির পর্যন্ত নাম। এলাকাবাসীর অভিযোগ এবং আমাদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এমনই কিছু সুদ ব্যবসায়ীর নাম । সুদ ব্যবসাকে যদি বৈধতা বা শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতো তবে তারাই হতেন এ শিল্পের নিপুন কারিগর বা সফল ব্যক্তি ।

সোনাপাতিল গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম রাজা,আল মামুন,আব্দুল কুদ্দুস,আসাদুর রহমান,মোঃ রনি,নাসিমুদ্দিন,মিন্টু ,মখলেসুর রহমান,হাবু মিয়া,আইয়ুব আলী,মাহবুবুর রহমান,লিয়াকত আলী সরকার । পেড়াবাড়িয়া গ্রামের রাজন এবং তার মা,হাসেন আলী, জুয়েল,শরিফ,,ফারুক,ছাতিয়ানতলার আইয়ুব আলী সহ আরোও রয়েছে ।

তবে তারাই এলাকার বড় সুদ ব্যবসায়ী বলে পরিচিত । দেখা গেছে, যেখানে বর্তমানে ব্যাংকে সুদের হার ৫%-৭%, সেখানে এসব সুদের ব্যবসাকারীরা ১২০%, বা কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী হারে সুদ নিচ্ছে। তাদের এ অতি সুদের লোভের কারনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বহু লোক। কেউ সুদ না দিতে পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ বা হয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্ত।

অন্যদিকে সুদের টাকা জোগাড় করতে কেউ জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধ মূলক কাজে। এ ব্যাপারে বাগাতীপাড়া উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল বলেন, মধ্যযুগ কিংবা সামন্তযুগ,সব সময়েই মহাজনী ব্যবসা বেশ জোরেশোরে চলছিল। কিন্তু সভ্যতার ক্রম বিকাশের যুগে এসে ওই প্রবণতার পথ রুদ্ধ হলেও অতি সম্প্রতি বাগাতিপাড়ার মহাজনী ব্যবসা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

আর মহাজনদের চড়াসুদের গ্যাড়াকলে পড়ে সাধারন মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে খুব দ্রুত প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। উপজেলার সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারীরাও এসব দাদন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

পুরো বইয়ের চেক স্বাক্ষর করে দাদন ব্যবসায়ীকে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে আবার টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নাটোরের বগাতিপাড়ার থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আব্দুল মতিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অসাধু দাদন দাতাদের হয়রানির শিকার হয়ে মানুষ মানষিক ভাড়সাম্য হারিয়ে ভিটামাটি ছারাহচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিচ্ছেন ৫০% চেকের (এন,আই এ্যাক্ট) মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যু হচ্ছে টাকা নেবার সময় ব্লাইংক চেক দিয়ে দিতে না পারায় দাদনদাতারা ইচ্ছে মত টাকার অংক বসিয়ে নিচ্ছেন। লাখে ১০ হাজার বা তার বেশি সুদে টাকা দেয়া নেয়া ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে সরাসরি আমাকে অবহিত করুন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যাবস্থা গ্রহন করাহবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগাতীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সুদ ব্যবসা অবশ্যই সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের কাছে এরকম ভুক্তভোগী কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.