সমস্যায় জর্জরিত হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, কমছে পর্যটক

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা, সাগরের জলরাশি ও ঢেউয়ের গর্জনের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর স্থান নিঝুম দ্বীপ। মায়াবি হরিণ, সুদীর্ঘ সমুদ্রসৈকত ও বিস্তৃত কেওড়া বনের সমাহার নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার এ দ্বীপ।
দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর হাজারও পর্যটক ঘুরতে আসেন এখানে। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় সম্ভাবনাময় নিঝুম দ্বীপে দিন দিন কমছে পর্যটকের সংখ্যা।
জানা গেছে, খানাখন্দে ভরা দ্বীপের প্রধান সড়কের কারণে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের। আকর্ষণ হারাচ্ছে দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্থানটি। তবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে দেশের অন্য যে কোনো পর্যটনকেন্দ্রের মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে দ্বীপটি।
২০০১ সালে সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করলেও চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দ্বীপে হাতেগোনা কয়েকটি থাকার হোটেল ও খাবারের রেস্টুরেন্ট থাকলেও তা খুবই নিম্নমানের। এতে দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকরা।
১৩ বছর আগে আইলা প্রকল্পের আওতায় আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার বিচ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আর মেরামত করা হয়নি। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে একাধিকবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি।
প্রতি বছর জলোচ্ছ্বাসের পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাটি দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হলেও কিছু দিন চলার পর তা আবারও গর্তে পরিণত হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় এই সড়কের ওপর দিয়ে ৬ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। এতে করে অনেক জায়গা ভেঙে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার মাঝখানে ছোট বড় অনেক গর্ত। জোয়ারের স্রোতে সড়কের মাটি সরে ভেঙে পড়েছে ঢালাই। মোটরসাইকেলে চলা গেলেও অটোরিকশায় করে চলাচল করতে কষ্ট হয়। ধাক্কা দিয়ে গাড়িগুলো পার করতে হয়। অনেক জায়গায় যাত্রী নামিয়ে খালি গাড়ি পার করেন চালকরা।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন অনেকে। কয়েকদিন আগেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নিঝুম দ্বীপের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আলাউদ্দিনের ছেলে সম্পদ। ধানবোঝাই টমটম উল্টে আহত হন কৃষক। দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় আবুল কালাম নামে আরেক কৃষকের। এ ছাড়া প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
দ্বীপের অটোরিকশাচালক জসিম মিয়া বলেন, ‘রাস্তার ঢালাই ভেঙে যাওয়ায় সরু পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। বন্দরটিলা বাজার থেকে যাত্রী এবং মালামালবোঝাই করে নামার বাজার যাওয়ার সময় আটকা পড়েছি। এখন গাড়ি থেকে মালামাল নামিয়ে মাথায় বহন করে ভাঙা অংশ পার করতে হবে। প্রতিদিনই আমাদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
আরেক অটোরিকশাচালক আবুল কালাম বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময় স্থানীয় মানুষের চেয়ে পর্যটকদের আনা নেওয়া করা হয়। কিন্তু রাস্তার এই খারাপ অবস্থা দেখে পর্যটকরা অনেক বিরক্ত হন। অনেকে মোবাইলে অন্যদের না আসার পরামর্শ দেন।’
পর্যটক শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘লোকমুখে শুনে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। যে কষ্ট পেয়েছি তাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছে মাটি হয়ে গেছে। সৌন্দর্যের মায়ায় পরে আবার আসার ইচ্ছে থাকলেও কষ্টের জন্য আসা হবে না।’
নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা নান্টু মাঝি বলেন, ‘আশ্বাসে আশ্বাসে দিন যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা শুনেছি ভেঙে যাওয়া ব্রিজটা হবে, কবে হবে জানি না। যদি ব্রিজ ও সংযোগ সড়কটা দ্রুত হয় তাহলে পর্যটকদের জন্য যেমন ভালো হতো, আমাদের জন্যও ভালো হতো।’
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. কেফায়েত হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যটক একটু কম। রাস্তাঘাট ভালো না তাই তারা এসে কষ্ট পাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে অনেক পর্যটক আসবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘দ্বীপটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য সরকারিভাবে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দ্বীপে পর্যটকের তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।’
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ চলছে। নিঝুম দ্বীপের প্রধান যে সড়কটি তা প্রতি বছর পরিবেশগত কারণেই বিপর্যস্ত হয়ে যায়। আমরা যদি বরাদ্দ পাই তাহলে সড়কটি সুন্দর করতে পারব।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আমাদের ডাকবাংলো ও কিছু রিসোর্ট আছে। যদি বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসে তাহলে আবাসন ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। পর্যটন করপোরেশন একটি আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটি চলমান রয়েছে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল (শিমুল)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.