রাজশাহীতে আজ রবিবার ও সূর্যের দেখা মেলেনি  ||  ঠাণ্ডায় ব্যাহত স্বাভাবিক জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার প্রকোপে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। গত দুইদিনের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও গতকাল শনিবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি।

এমনকি আজ রবিবার ও যুর্য মামার দেখা নাই। ভোর থেকেই আকাশ ঘন মেঘে ঢেকে যায়। চারপাশ হয়ে পড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন। সারাদিনই সূর্যের দেখা মেলেনি। আর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে নগরবাসী হয়ে পড়ে জবুথবু।

সারাদিনই ছিলো এমন আবহাওয়া। গতকাল থেকেই  রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও ছিলো তুলনামূলকভাবে কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে রাস্তাঘাটে বের হতে দেখা যায়নি। এই আবহাওয়া আরো দুই দিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

রাজশাহীতে মহাসড়কগুলোতে ভোর থেকে প্রধান সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। আর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরেও বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, বেলা যতই বাড়ছে ঘন কুয়াশাও যেন আড়মোড়া দিয়ে প্রকৃতির সব কিছুকে ততই কোলের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। এর ওপর বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

টানা চারদিন হলো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের তাপ না থাকায় হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন শহরের পথে-ঘাটে থাকা ছিন্নমূল মানুষ।

আবহওয়া অফিসের তথ্য মতে, এ বছর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের দিন শুক্রবার রাজশাহীর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এই আবহাওয়া আরো দুইদিন পর্যন্ত থাকবে। তারপর আবার তাপমাত্রা বাড়বে। তখন এতো শীত অনুভূত হবে না।

আর গত দুইদিনের চেয়ে আজ তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ও ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

নগরীর আদালতপাড়া র  চা বিক্রেতা আসাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এইবছর মনে হচ্ছে শীত বেশি। তীব্র শীতে খুব কাহিল অবস্থা। সারাদিনই সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। বাহিরে বের হওয়াই যাচ্ছে না।একজন

রিকশাচালক  বলেন সকাল ৭ টার সময় বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন অথচ দুপুর ১টা পর্যন্ত ভাড়ায় আয় করেছেন মাত্র ৩০ টাকা। তিনি বলেন, শীতের কারণে লোকজন কম থাকায় ভাড়াও কম হচ্ছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ে এতক্ষণে ৩০০ টাকার মতো ভাড়া হতো। সপ্তাহে ২ হাজার টাকার কিস্তি আছে তাই বাধ্য হয়েই এই শীতে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে।

এদিকে শীতের কারণে মহানগরীর বিপণি-বিতান ও ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিনই বিপণিবিতানগুলোতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের গরম কাপড় কিনতে দেখা যাচ্ছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষদের গরম কাপড় কিনতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে গরম কাপড় বিক্রি বেড়ে গেছে। আমার এই ছোট ফুটপাতের দোকান থেকেই প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

তবে শীতে এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদেরকে সেভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি। তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস থেকে জানানো হয়েছে তারা ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে দরিদ্র মানুষের মাঝে।

এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগি বৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ঠাণ্ডার কারণে নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভর্তি হচ্ছে।

আমরা হাসপাতালের রোগিদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে রুম হিটারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া শিশু ওয়ার্ডগুলোর জানালা পর্দা ও কাপড় দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিয়েছেন।

এদিকে এমন ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকলে কৃষিতে ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এই সময়টায় এসে কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেটব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এবছর শুরু থেকেই শীতের প্রকোপ কম। তবে মাঝ সময়ে এমন আবহাওয়া রবি শস্যের জন্য কাল হয়ে ওঠে। তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। এখন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করছেন। ফসলকে নিরাপদ রাখতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এছাড়া কৃষকরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন। মোবাইল অ্যাপস ও হট লাইনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই কৃষি তথ্য সেবা নিচ্ছেন। সেইমতে ফসলের পরিচর্যাও করছেন বলে জানান রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.