রাইসির মৃত্যু: ইরানের রাজনীতিতে ‘অনিশ্চয়তা’

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হবেন বলে ধারণা ছিল সবার। তবে তার মৃত্যুতে দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কে হবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে এই মৃত্যু শুধু সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রেই নয়, বরং তেহরানের শাসকগোষ্ঠীতে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার রদবদলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকে।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ইরান। চলছে তাকে শেষ বিদায় জানানোর প্রস্তুতি। তবে রাইসির এই মৃত্যুতে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ধারণা করা হয়, ধর্মগুরু থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ইব্রাহিম রাইসিই হতেন ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।
৮৫ বছর বয়সী খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে রাইসির নামই বেশি শোনা গেছে। কিন্তু তার মৃত্যুতে এখন এই পদে ভবিষ্যতে কে আসবেন, সে প্রশ্ন সামনে এনেছে। উত্তরসূরি হওয়ার মতো কোনো প্রার্থী আপাতত না থাকায়, এ পদের দৌড়ে এখন অনেকেই সামনে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এতে তাদের মধ্যে শুরু হতে পারে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে রাইসিকে যারা খামেনির জায়গায় দেখতে চেয়েছিলেন, তাদের আশা দুমড়ে-মুচড়ে গেছে রোববারের (১৯ মে) দুর্ঘটনায়।
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাই ইরানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দুই জন সেই চূড়ান্ত ক্ষমতার শীর্ষে বসতে পেরেছেন। ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির মৃত্যুর পর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচিত হন। তার আগে খামেনিও দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকেই খামেনি দেশের শাসনক্ষমতার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছেন। চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তার নির্দেশই শেষ কথা। ফলে রাইসির পর আলী খামেনির মৃত্যু গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনেও হতে পারে ব্যাপক রদবদল।
তবে খামেনি এখনও পর্যন্ত তার কোনো উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেননি। ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার এ পদে কে থাকবেন, তা নির্ধারণ করে বিশেষজ্ঞ পরিষদ বা ৮৮ জন ধর্মীয় নেতার ‘অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’। নতুন কোনো সর্বোচ্চ নেতার দরকার হলে বা কখনও যদি এই পরিষদ মনে করে শীর্ষ নেতা তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছেন না, তাহলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দিতে পারেন তারা। পরিষদটির সদস্যদের নির্বাচনের মাধ্যমে বাছাই করা হয়। কিন্তু কারা সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবেন, তা নির্ভর করে দেশটির ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’ নামের একটি কমিটির অনুমোদনের ওপর। এই দুটি পরিষদের ওপরই সর্বোচ্চ নেতার প্রভাব থাকে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্ধারণী পরিষদ সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণে ছয় মাস আগে খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরির তালিকা থেকে রাইসির নাম বাদ দেয়। তারপরও রাইসিপন্থি প্রভাবশালী ধর্মগুরুরা সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরির তালিকায় তার নাম পুনর্বহালের জোর চেষ্টা চালান।
এছাড়া, খামেনি যেভাবে রাইসিকে টেনে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে তিনি তাকে উত্তরসূরি হিসাবে চেয়েছিলেন তেমন লক্ষ্যণই প্রকাশ পেয়েছে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু রাইসির মৃত্যু বড় ধরনের এক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, যা ইরানের শাসকগোষ্ঠীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করতে পারে বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.