বাগমারায় লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বোরো চাষে ব্যস্ত কৃষক

 


বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কৃষকরা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বোরো ধান চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দফায় দফায় সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কৃষককের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এই কাজে নিয়োজিতরা প্রতি নিয়তই ফসলের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন মুলধন হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। অনেকেই মহাজন ও ব্যাংক ঋণের টাকায় ফসল করে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে নিঃশ্ব হয়ে পথে বসেছেন। গ্রামের কৃষকদের অবলম্বন কৃষি। অন্য কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে আদি পেশা কৃষি উৎপাদনে মওসুমের বোরো ধান চাষ অব্যাহত রেখেছেন।
জানা গেছে, এ এলাকার বেশী ভাগ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। বিগত কয়েক বছর ক্ষেতে ধান, পেঁয়াজ, সবজিসহ ফসলের উৎপাদন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ উঠছে না। উপজেলার বালানগর গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী, রফিকুল ইসলাম, অছির উদ্দিন সহ অনেকে, চার যুগ ধরে তিনি কৃষি কাজ করে আসছেন। কিন্তু গত দু’ বছল ধরে ফসল করে লাভ হচ্ছে না।
এই ধারাবাহিকতায় ধানচাষে ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন তারা। সার, কীটনাশক ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি শ্রমিকের মুজুরী ১০ গুন হারে বেেড়ছে। এলাকায় শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মজুরীর অধিক হারে বেড়েছে। ধানের ন্যায্য মূল্য কৃষকদের হাতে না পাওয়ায় লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারো বোরো ধান চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েক হাত বদলিয়ে ধানের বাজার অস্থির মনে হলেও এর ন্যায্য দাম থেকে কৃষক বঞ্চিত কৃষক। এ অবস্থায় মৌসুমে আবারো বোরো ধানচাষ করতে হবে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, গত মৌসুমে আমন ধানের ভালো ফলন, কিন্তু কম মূল্যের কারণে বিঘাই ৮/১০ হাজার টাকা তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। বীজ, পাওয়ারটিলারের ডিজেল খরচ, বিদ্যুতের বিল, শ্রমিক খরচ দিয়ে ১ বিঘা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে ধান ১৪ শত- টাকা থেকে এক ১৫ শত টাকায় বিক্রি হবার কথা তা না হয়ে ১২ শত থেকে ১৩ শত টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। একই ভাবে গোপালপুর গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, এবারে মৌসুমের রোপা আমন ধান চাষে করে ব্যাপক ক্ষতিতে বসেছেন। সব খরচ মিলে তার ৩ বিঘা ধান চাষে ২৫ হাজার টাকা তার লোকশান। এবারে ধানের চাষে গত বারের তুলনায় বেশী খরচ হবে জেনে তিনি শুধুমাত্র খাবার পরিমান ধান চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
নন্দনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, বাপ জাদার চৌদ্দ গোষ্টি ধরে কৃষি কাজে জড়িত, বর্তমানে কৃষি কাজে নিঃশ্ব হয়ে গেলাম। কিন্তু কি উপায় বিকল্প কোন পথ নেই, তাই লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়েও আবারো বোরো ধান চাষে নেমেছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে ইরি-বোরো ভরা মওসুমে এই উপজেলায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তার মতে কৃষি শ্রমিক না পাওয়ায় চাষাবাদও কিছুটা কমেছে। কারণ শ্রমিকের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। কৃষি কর্মকর্তার মতে, কৃষিতে পুরোমাত্রায় যদি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় তবে এই সংকট অনেকাংশে কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মো: আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.