প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে ঠাঁই হলো হতদরিদ্রদের

নওগাঁ প্রতিনিধি: পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া চার শতাংশের জমির মালিক ৮০ বছরের বৃদ্ধা শহিফ উদ্দিন। আর এই এক টুকরো জমির উপর পাঠ কাঠি (সিনট), ছনের (বুনের) বেড়া ও টিনের ছাউনির ঘর। এই একটি ঘরে ছয় সদস্য-স্ত্রী বেনু আরা বেগম, ছেলে রাশিদুর, ছেলের বউ ও দুই বাচ্চাকে নিয়ে বসবাস করতেন। ছেলে তার বউ ও দুই বাচ্চাকে নিয়ে বেড়ার ঘরে বসবাস করলেও দুই বৃদ্ধা থাকতেন ঘরের বাহিরের বারান্দায়।

শীতকালে ঠান্ডা আর বর্ষাতে পানির সাথে সংগ্রাম করে চলেছেন প্রায় ৪০ বছর। ছেলের আয়ে চলে তাদের সংসারের ছয় সদস্যের ভরপোষণ। আর পেশা বলতে কখনো কৃষি কাজ। আবার কখনো ভ্যান চালানো। তাই অভাবি এই সংসারে কখনো নতুন বাড়ী তৈরী করার স্বপ্ন কল্পনাতে আসেনি তাদের।

যেসব স্বপ্ন কখনো মাথায় আসেনি, কিন্তু আলাদিনের চেরাগের মতো আশ্চর্য ভাবে পাওয়া তাদের আধাপাকা একটি টিনের বাড়ী হয়েছে। সাথে একটি টয়লেটও। গত দেড়মাস থেকে সেই বাড়ীতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন তারা। শুধু মথুরাপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের বৃদ্ধা শহিফ উদ্দিন একাই আধাপাকা টিনের বাড়ী পেয়েছেন তা নয়।

তার মতো নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে ১০০ টি পরিবার একটি করে আধাপাকা টিনের বাড়ী পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘সবার জন্য বাসস্থান’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জমি আছে, ঘর নাই’ আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় হতদরীদ্রদের এসব আধাপাকা বাড়ী দেয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে ৯৯ টি ও আধাইপুর ইউনিয়নে ১টি ঘর। প্রতিটি ঘর ও টয়লেটের বরাদ্দ ১ লাখ টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে গত তিন মাস থেকে এসব ঘর নির্মানের কাজ করা হয়েছে।

তবে সুবিধাভোগীরা ঘর ও টয়লেট পেয়ে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললেও সরকারের কাছে দাবী করেছেন একটি নলকুপের। এসব সুবিধাভোগীদের একটি নলকুপ স্থাপনের সামর্থ্য না থাকায় নানান অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। অন্যের বাড়ি থেকে খাবারের পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে নানান কথা শুনতে হয় বলে জানা গেছে।

লক্ষ্মিকুল গ্রামের রাজেদা বেগম বলেন, স্বামী কৃষি কাজ করে। তার একার আয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হতো। ছেয়ে মেয়েদের নিয়ে বেড়ার ঘরে বসবাস করতাম। যেখানে বাড়ি করার কোন স্বপ্ন দেখতাম না সেখানে এখন সরকার থেকে বাড়িটি পাওয়ায় খুব সুবিধা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে মাথা গোজার মতো একটা জায়গা পেয়েছি।

এছাড়া রয়ালপুর গ্রামের আফজাল হোসেন, থুপশহর গ্রামের জোসনা ও লিলিসহ ১০-১২জন বলেন, সরকার থেকে বাড়িটি পাওয়ায় তাদের সুবিধা হয়েছে। দীর্ঘদিনের দুংখ-কষ্ট লাঘব হয়েছে। এখন খেয়ে না খেয়ে থাকলেও মাথা গোজার মতো একটা জায়গা হয়েছে। শেখের বেটিকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তা বলে প্রকাশ করার মতো না।

প্রতিবেশীদের বাড়ী থেকে খাবার পানি নিয়ে আসতে হয়। বাড়ির সাথে যদি একটি নলকুপ দিতে তাহলে পানির কষ্টটা দুর হতো। মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য সুন্দর একটি পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে আজ হতদরিদ্রদের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে।

যারা কখনো চিন্তাই করতে পারেনি আধাপাকা ঘর করার, তারা এখন সুখে শান্তিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। আর এ প্রকল্পের কাজ যেন অব্যহৃত থাকে। তবে ঘরের পাশাপাশি হতদরিদ্রদের জন্য পানির সরবরাহের ব্যবস্থা করলে তাদের জন্য আরো সুবিধা হবে। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্পের সভাপতি মাসুম আলী বেগ বলেন, যারা ঘরগুলো পেয়েছেন তারা একেবারে হতদরীদ্র।

তারা এক সময় বেড়ার ঘরে জীবনযাপন করত। এখন তারা অনেকটাই ভাল ভাবে থাকতে পারছেন। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ঘরের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ঘরের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরো বরাদ্দের জন্য চিঠি দেয়া হবে। আগামীতে উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতে বরাদ্দ সাপেক্ষে ঘর তৈরী করে বাঁকীদেরও দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, বরাদ্দের মধ্যে একটি বাড়ী ও একটি টয়লেট ছিল। তবে ভবিষ্যতে আমাদের অন্য কোন ফান্ড আসলে গ্রুপিং এর মাধ্যমে বা ট্যাপ কলের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে সবাই সেখান থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.