নরসিংদীতে কারখানায় চীনা নাগরিকের মৃত্যু, ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্বজনদের অবস্থান

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি ডেনিম সুতা তৈরির কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন একজন চীনা নাগরিক। ৩ মে দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই কারখানার একটি মেশিন চালু অবস্থায় মেরামত করার সময় এর ভেতরে পড়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে মারা যান তিনি। খবর পেয়ে চীন থেকে আসা তাঁর স্বজনেরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুই দিন ধরে কারখানাটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছেন।
ফুজিয়ান ওনান টেক্সটাইল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সুতা কারখানাটির অবস্থান নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ শিলমান্দী এলাকায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটির মালিকের নাম চেন ঝং হো, তিনিও চীনের নাগরিক। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলেও নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা এতে সন্তুষ্ট নন।
নিহত ওই চীনা অপারেটরের নাম লি রোং হোয়া (৫৭)। তিনি চীনের জিয়াংসু এলাকার নাগরিক। ৮ মাস ধরে কারখানাটিতে কাজ করছিলেন তিনি। লি রোং হোয়া কারখানাটির চায়না বেল্ট মেশিন অপারেট করতেন। তাঁর লাশ ৯ দিন ধরে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফ্রিজিং করে রাখা আছে। স্বজনদের অবস্থান নেওয়ার পরই তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি জানাজানি হয়।
আজ শুক্রবার (১২ মে) দুপুর ১২টার দিকে কারখানাটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, লি রোং হোয়ার স্ত্রী ঝিং মেইলিং, ছেলে লি রংইয়ান ও পুত্রবধূ লি জিজি ফটকের সামনে বসে আছেন। পুলিশের ১০-১২ জন সদস্য তাঁদের ঘিরে রেখেছেন। এ সময় ঝিং মেইলিংকে মাটিতে বসে কাঁদতে ও অন্য দুজনকে মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
কারখানাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানান, পুরো কারখানাটি সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। ঘটনার ফুটেজে দেখা গেছে, ৩ মে দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিটে লি রোং হোয়া বেল্ট মেশিনে কাজ করছিলেন। সে সময় মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে তিনি মেশিন বন্ধ না করে চালু অবস্থাতেই তা মেরামত করতে শুরু করেন। মেশিনের ওপর দাঁড়িয়ে মেরামত করার একপর্যায়ে লি রোং এর ভেতরে পড়ে যান। এতে কোমর বরাবর দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ লাশ কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর স্বজনদের অপেক্ষায় লাশ রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফ্রিজিং করে রাখা হয়।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের খরচে ৭ মে চীন থেকে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের আনা হয়। ওই সময় তাঁদের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই স্বজনেরা ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কারখানাটির মালিক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন। কিন্তু স্বজনেরা ৫ কোটি টাকার কমে এ ঘটনার মীমাংসা করতে রাজি নন। একপর্যায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নেন। তাঁদের ভেতরে এসে বসার জন্য বলা হয়েছে এবং কয়েক দফা খাবার প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা সাড়া দেননি। চীনা দূতাবাস থেকে তাঁদের ডাকা হয়েছে, সেখানেও যাচ্ছেন না তাঁরা।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নওশাদ আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘নিহত চীনা অপারেটরের স্বজনেরা কেন এত টাকা দাবি করছেন, সেটাই বুঝতে পারছি না। চায়না লেবার ল অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটলে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় সর্বোচ্চ যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, আমরা এর চেয়ে বেশি দিচ্ছি। তারা ৫ কোটি টাকা দাবি করছেন, আমরা বলেছি ১ কোটি ৪০ লাখ দেব। এই বিষয়ে চীনা দূতাবাস ও আইনজীবীদের সঙ্গেও আমরা কথা বলছি, কিন্তু নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কারও কোনো কথাই শুনছেন না। তাঁদের দাবি অনুযায়ী ৫ কোটি টাকা দেওয়া হলে কারখানাটি বিক্রি করে দিতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হারুনুর রশীদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি দুর্ঘটনা। চীন থেকে আসা নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা অস্বাভাবিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে দুই দিন ধরে কারখানাটির সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের কথা আমরা বুঝি না, আমাদের কথাও তাঁরা বোঝেন না। এখন কারখানা কর্তৃপক্ষকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য আমরাও সেখানে অবস্থান নিয়েছি।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নরসিংদী প্রতিনিধি মো. গোলাম মোস্তফা মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.