জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ী সীমিত রাখি — আই ডাব্লিও বি

বিশেষ প্রতিনিধি: বিপুল সংখ্যার মানুষের বসবাস এই রাজধানী ঢাকাতে। নগরবাসীর প্রতিদিনের একটি কষ্টের নাম হল যানজট। প্রতিদিন যানজটে পড়ে নগরবাসীর শুধু কর্মঘন্টাই নষ্ট হচ্ছে এমনটা নয়, শারীরিক ও মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকা’র তীব্র যানযটের অন্যতম কারণ হল মাত্রাঅতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ী। এক হিসেবে দেখা যায় যে, ঢাকার সড়কের ৭০ শতাংশ রাস্তা মাত্র ৫ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ী দখল করে আছে।
তাছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ী অনেক জ্বালানিও ব্যবহার করছে, যার ফলে দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এই বাস্তবতায় বিশ্ব গাড়ীমুক্ত দিবস উদযাপন শুরু হয়। জলবায়ু বিপর্যয়, দূষণ ও শহরের তীব্র যানজটের কারণে বর্তমানে বিশ্ব গাড়ীমুক্ত দিবস উদযাপন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোজ বুধবার “জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ী সীমিত রাখি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে “ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ” রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির ২নং রোডে বিশ্ব গাড়ী মুক্ত দিবস উদযাপন করে।
বিশ্ব গাড়ীমুক্ত দিবস উদযাপনে শিশুদের জন্য দেশীয় নানান খেলার আয়োজন ছিল। এই আয়োজনে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির নানা বয়সের শতাধিক শিশু-কিশোরদের আনন্দের সাথে স্বতঃর্স্ফূত অংশগ্রহণ ছিল। তারা বিভিন্ন খেলা যেমন- লুডু, দাবা, দড়িলাফ, কেরাম, ব্যাডমিন্টন, পিলোপাসিং, কানামাছি, চকলেট ও বিস্কুট দৌড় ইত্যাদি খেলার পাশাপাশি ‘আমার শহর আমি কিভাবে দেখতে চাই’ এই শিরোনামে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা ও শিশু কিশোরদের সচেতন নগরবাসী হিসেবে গড়ে তুলতে কুইজ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ছিল। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে লটারীর মাধ্যমে সেরা ১০ জনকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক দেবরা ইফ্রইমসন বলেন, আমাদের শিশুদের সামনে একটি বড় বিপদ, তা হচ্ছে জলবায়ু বিপর্যয়। এই জলবায়ু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। যার বেশির ভাগ অংশই ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ীতে। তাই এখনই সময় ব্যক্তিগত গাড়ীকে না বলার।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, শহরে খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই। ঢাকা শহর যে অপরিকল্পীতভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে খেলার মাঠ ও গণপরিসর তৈরি করা অনেক সময় সাপেক্ষ ও জটিল। প্রতিটি এলাকার কিছু সড়কে যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধ করে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারি।
মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি’র সভাপতি এ.আর.এম ছালেরে জাহান বলেন, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত কারফ্রী স্ট্রিটে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য গণপরিসর বৃদ্ধি এই মহতী কার্যক্রমকে স¦াগত জানাই। অপ্রতুল গণপরিসরের অভাবে আমাদের সন্তানরা মোবাইল ও ভিডিও গেইমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা ভবিষৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছি। তাই প্রতিটি এলাকায় ও কমিউনিটিতে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা, সামাজীকিকরণ ও বিনোদনের জন্য কারফ্রী স্ট্রিট নিশ্চিত করা আমাদের নিজেদের দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুল হাসান এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক দেবরা ইফ্রইমসন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি’র সভাপতি এ.আর.এম ছালেরে জাহান, মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি’র সেক্রেটারি মোঃ বদরুল বারী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সত্তার মিয়া, মোহাম্মদী ইয়ুথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এস.এম. জুলফিকার হায়দার, আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি’র আবাসন কল্যাণ সমিতির সদস্যবৃন্দ ও এলাকার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদী ইয়ুথ ক্লাব, সাইকেলার্স অব বাংলাদেশ, বায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, স্কেটিং৭১, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স, লোকাল ফিউচার, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ ইত্যাদি সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য “সড়ক পথিকের জন্য, গাড়ীর জন্য নয়”, গণপরিসর বৃদ্ধির মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং সামাজিকীকরণকে গুরুত্বর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্যক্তিগত গাড়ী ব্যবহার হতে নিরুৎসাহিত করা
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি আবু সায়েম মোহাম্মদ সা‘-আদাত উল করীম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.