চলনবিলে ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কটের শঙ্কা !

নাটোর প্রতিনিধি: চলনবিলে এখন চলছে বোরো ধানের মৌসুম। আর সপ্তাহ-খানেক পরেই ধান কাটা শুরু হবে। চলনবিলাঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটা না হলে বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের। ২০১৭ সালে বন্যার পানি উঠায় ব্যাপক ক্ষতি হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের।

ধান কাটার এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা চলনবিল এলাকায় ধান কাটার জন্য আসার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সারা দেশ কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন নির্দেশাবলী রয়েছে।

চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় মহামারি করোনার দূর্যোগে শেষ পর্যন্ত চাহিদা মত শ্রমিক দিয়ে সঠিক সময়ে সুষ্ঠুভাবে জমি থেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।

এখন বৈশাখ মাস। ইতিমধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য খোলা পরিস্কার, ধান মাড়াই করার যাবতীয় কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ সহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে এ অঞ্চলের কৃষাণ ও কৃষাণীরা।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবং তুলনামূলক তেমন রোগ-বালাই না থাকায় চলনবিলের মাঠ জুড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে কৃষক। করোনার প্রভাবে শ্রমিক সঙ্কটের শঙ্কায় রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

উপজেলার ডাহিয়া গ্রামের কৃষক আলহাজ্জ্ব মোল্লা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ধান কাটা মৌসুমে আমাদের এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে যায়।

কিন্তু এবার কী হবে?

এর মধ্যে অনেক জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় অন্য জেলা থেকে কীভাবে শ্রমিকরা আসবেন। যদি শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যে সময় মতো আসতে না পারেন, তাহলে কীভাবে ধান ঘরে উঠবে? বেশ দূশ্চিন্তায় আছি।

আয়েশ গ্রামের কৃষক শেখ বাহা উদ্দিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার জমিতে ধান প্রায় পেকে গেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভাল হবে আশা করছি। শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। তারা আগামী সপ্তাহে আসতে চেয়েছে। শ্রমিকরা না আসলে বিপদের সীমা থাকবেনা।

মানিক দিঘী গ্রামের দিনমজুর মধু মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবছর বৈশাখ মাসের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এসময় ধান কেটে যে ধান পাই তা দিয়ে আমার সংসারের সারা বছরের খাবার হয়। এবছর মনে হয় করোনা আতঙ্কে ধান কাটতে পারবো না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৫’শ হেক্টর। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬’শ ৫০ হেক্টর। কৃষি অফিসের তথ্য মতে প্রতিবছর এই উপজেলায় বোরো ধান কাটা মৌসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ ১৬টি জেলা থেকে শ্রমিক আসে ধান কাটতে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন রাজশাহী বলেন, চলমান করোনার এই দূর্যোগে বিভিন্ন জেলা থেকে চাহিদা মত শ্রমিকরা সময় মতই আসবেন। শ্রমিকের কোন সঙ্কট হবেনা।

এছাড়া ইতিমধ্যে সিংড়া পৌরসভাসহ ৫টি ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে ৫০% কমিশনে ৬টি ধান কাটার মেশিন (কাম্বাইন হার্ভেস্টার) বিক্রয় করা হয়েছে। এই মেশিনে ঘন্টায় ৩ বিঘা জমির ধান কাটা যাবে। সব মিলে কৃষকরা সঠিক সময়ের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষকের শ্রমিক চাহিদা কৃষি অফিসে দিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে শ্রমিক দেয়া হবে।

চলনবিল কৃষি নির্ভর অঞ্চল, এ অঞ্চলে যেন কোন প্রকার শ্রমিক সঙ্কট না হয় সেজন্য প্রচেষ্টা চলছে। আশা করছি, শ্রমিকের কোন সঙ্কট হবেনা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.