ক্রেমলিনে কথিত হামলা রাশিয়ার সাজানো নাটক?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার চেষ্টা হিসেবে কথিত ড্রোন হামলা রাশিয়ার সাজানো নাটক বলে মনে করছে মার্কিন থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। তারা বলছে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের জন্য নতুন সেনা নিয়োগের উদ্যোগকে ন্যায্যতা দিতে এই হামলার ঘটনা সাজানো হয়েছে।
বুধবার রুশ সরকারের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, মস্কোতে পুতিনের সরকারি বাসভবনের কাছে দুটি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ক্রেমলিন বলছে, পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলায় পুতিনকে হত্যার চেষ্টা হিসেবে ড্রোনগুলো পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেন এই কথিত হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নিউজউইকের খবরে বলা হয়েছে, ক্রেমলিনের ভেতরে ড্রোনগুলোর নাটকীয় বিস্ফোরণের একটি ভিডিও অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কথিত ড্রোন হামলার ভিডিও এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেকে বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত প্রপাগান্ডার জন্য হামলার ঘটনা সাজানো হয়ে থাকতে পারে। যাতে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন আদায় করা যায়।
বুধবার রাতে আইএসডব্লিউ এক প্রতিবেদনে বলেছেন, কথিত গুপ্তহত্যার ঘটনা সম্ভবত রুশ সরকারের সাজানো। এর লক্ষ্য হতে পারে যুদ্ধ রুশ জনগণের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা এবং আরও বেশি সেনা সংগ্রহের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।
মার্কিন থিংক ট্যাংকটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছু ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে এই হামলা সাজানো ঘটনা। কারণ, রাশিয়া সম্প্রতি নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা সামর্থ্য জোরদার করেছে। ফলে একাধিক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইউক্রেনীয় ড্রোনের ক্রেমলিন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ খুব কম। আর তাছাড়া এটি ধ্বংস হয়েছে এমনভাবে, যা ক্যামেরায় খুব চমৎকারভাবে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।
আইএসডব্লিউ আরও বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন যদি এমন অবাক করার মতো হামলা চালাতো তাহলে পুতিনকে হত্যা চেষ্টার এমন ঘটনায় ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া হতো অনেক বেশি বিশৃঙ্খল। দ্রুত ও সুসংহত উপস্থাপনা প্রমাণ করে রাশিয়া ৯ মে বিজয় দিবসের ছুটিকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা সাজিয়েছে। যাতে দেশের নাগরিকদের কাছে যুদ্ধের বিষয়টি নতুন করে হাজির করা যায়।
ইউক্রেন সরকারের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে আইএসডব্লিউ বলেছে, রুশ সেনারা সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাদের সামরিক পোশাক সংগ্রহ করেছে। তারা সীমান্ত এলাকায় সাজানো অভিযান পরিচালনা করার জন্য এসব পোশাক সংগ্রহ করেছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রেমলিনপন্থি সামরিক ব্লগাররা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মলদোভার বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে ইউক্রেনের একটি আক্রমণ আসন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিআইএ কর্মকর্তা মিক মুলরয় বলছেন, পুতিনের গতিবিধিতে কড়া নজর রাখছে ইউক্রেন। ফলে তাদের জানার কথা পুতিন ওই সময় ক্রেমলিনে নেই।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাশিয়া এই হামলার ঘটনা সাজিয়েছে। যাতে ইউক্রেনসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপানো যায়।
এমন সময় এই কথিত হামলার কথা জানালো ক্রেমলিন যখন যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউক্রেন তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুতিনকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইউক্রেন, ক্রেমলিনের এমন অভিযোগের বিষয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বিষয়টি একেবারে সোজা। রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও জয় পাচ্ছে না। তিনি তার দেশকে অনুপ্রাণিত করতে পারছেন না। সেনাদের মৃত্যুর মুখে আর পাঠাতে পারছেন না তিনি। ফলে জনগণকে কোনোভাবে অনুপ্রাণিত করা জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা মুলরয় বলছেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে নিশানা করতে হয়তো রাশিয়া এই কথিত হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। অতীতে তারা এমনটি করেছে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলার ঘটনার পর মস্কোর প্রতিক্রিয়া ছিল খুব সুসংহত। তারা প্রশ্ন তুলছেন, ক্রেমলিনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির আগে কেন বিস্ফোরণের কোনও খবর সামনে আসেনি। কথিত বিস্ফোরণের ১২ ঘণ্টা পর ক্রেমলিন বিবৃতি দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ক্রেমলিনের যেকোনও বক্তব্যকে খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। (সূত্র: নিউজউইক, দ্য গার্ডিয়ান)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.