উজিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠকর্মী সানোয়ারের নারী কেলেঙ্কারী ও কোটিপতি হওয়ার গোমর ফাঁস

উজিরপুর প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠকর্মী খান মোঃ সানোয়ারের নারী কেলেঙ্কারী ও কোটিপতি হওয়ার গোমর ফাঁস হয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে একের পর এক নারী কেলেঙ্কারী, দূর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য। তিনি উজিরপুর উপজেলার ১১টি ব্রাঞ্চের কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধি হওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন না।

আর এই দূর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন তিন তিনটি বিলাসবহুল জমিসহ বাড়ি। নিজে চালান দামী ব্রান্ডের মোটরসাইকেল। এ নিয়ে খোদ ব্যাংক ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

খান মোঃ সানোয়ার পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামের মৃত কৃষক আমজেদ আলী খানের ছেলে। তিনি তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট।

২০০৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্র ব্যবস্থাপক (মাঠকর্মী) পদে শিক্ষানবীশ হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে একই পদে উজিরপুরে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে অফিসার (মাঠকর্মী) পদে কর্মরত।

দীর্ঘদিন উজিরপুর থাকার সুবাদে গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট চক্র। ছাত্র জীবনেই নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় হাজতবাস করার অভিযোগও রয়েছে।

উজিরপুর ব্রাঞ্চের এক নারী মাঠকর্মীর সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে ওই মাঠকর্মীর স্বামী তার বিরুদ্ধে মামলাও করেন। শুধু তাই নয় একে কেন্দ্র করে ওই ব্রাঞ্চের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু জাফরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এ ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা হলে মামলার তদন্তে সন্দেহের তীর সানোয়ারের বিরুদ্ধে বলে একাধিক সূত্র জানায়। তার বিরুদ্ধে বাবুগঞ্জ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়েছিল।

এমনকি এক শিক্ষকের কাছে ফোন করে ইয়াবা চেয়ে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করেন তিনি। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের পাশেই একটি ফ্লাটে প্রবাসীর স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন। তার যৌন হয়রানি ও উক্তক্তের কারণে ওই প্রবাসীর স্ত্রী অন্যত্র গিয়ে বাসা ভাড়া নেয়।

ওই নারী গতকাল সোমবার (৩১ আগষ্ট) উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মজিদ সিকদার বাচ্চুর কাছে সানোয়ারের উপস্থিতিতে অভিযোগও দিয়েছিলেন। বিভিন্ন কেন্দ্রের সুন্দরী সহজ সরল ও প্রবাসীর স্ত্রীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে সর্বশান্ত করে ফেলেন।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধি হওয়ায় বদলী বানিজ্যের অভিযোগ। অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সানোয়ারের বিরুদ্ধে আর বদলী হন একই ব্রাঞ্চের নিরাপরাধ মাঠকর্মী আঃ সালাম।

অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে তার বর্তমানে মূল বেতন ১৮ হাজার ৫১০ টাকা। সর্বসাকুল্যে ২৯ হাজার ২১৪ টাকা। অফিসিয়াল বিভিন্ন কর্তন বাদে নগদ পান ১৩ হাজার ২৭০ টাকা। কিন্তু তিনি ব্যুরো বাংলাদেশের এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করে প্রতিমাসে কিস্তি পরিশোধ করেন ২০ হাজার টাকা।

গ্রামীণ ব্যাংকে তার স্ত্রীর নামে লোন তুলে প্রতিমাসে পরিশোধ করেন ৩২ হাজার টাকা। পূবালী ব্যাংকে প্রতি মাসে ঋণ পরিশোধ করেন ১২ হাজার টাকা। জাগরণী চক্রে প্রতিমাসে পরিশোধ করেন ১২ হাজার টাকা। সর্বমোট কিস্তি পরিশোধ করেন ৭৬ হাজার টাকা। চাকুরী নেয়ার পরে তার নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বাড়ি।

উজিরপুরের ৩নং ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে বিলাসবহুল দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। একই ওয়ার্ডের রাখালতলা স্কুল সংলগ্ন ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে তৈরী করেন একতলা ভবন। এ ছাড়া বরিশালের কাশীপুরে নিজনামে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। উজিরপুরের পরমানন্দসাহা গ্রামের স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তার রয়েছে নামে বেনামে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ।

তবে অভিযোগ রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এক সময় ১ হাজার ডিপিএস এর ক্ষেত্রে ১০ বছর মেয়াদে ২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল, আর ৫শত টাকার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ১২ হাজার ১৩৫ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার নীতিমালা জারী করে। তবে ওই তরিখের পরে যারা ডিপিএস করবে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

কিন্তু সুচতুর সানোয়ার পূর্বের ডিপিএস হোল্ডারদের মেয়াদ শেষ হলে নতুন প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে ১ হাজার টাকার ডিপিএস গ্রাহকদের ১ লক্ষ ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করেছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রাহকদের পাসবই এর পাতা পরিবর্তন করে বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

সূত্রে জানায়, তার রয়েছে ৬ শতাধিক গ্রাহক ও ৬ শতাধিক ডিপিএস হোল্ডার। গ্রামের সহজ সরল অবলা গ্রাহক নারীরা মাঠকর্মীকে অগাধ বিশ্বাস করেন, তাদের সেই বিশ্বাসকেই পুঁজি করছেন তিনি। শতশত গ্রাহকদের বই বাসায় জমা রাখারও অভিযোগ রয়েছে। তার এই অপকর্মের সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

ডিপিএস হোল্ডার প্রবীন শিক্ষক ডাক্তার রতন কুমার দত্ত বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তার ১ হাজার ডিপিএস এ ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

গ্রাহক ঝন্টু সিকদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তার সঞ্চয়ের ১০ হাজার টাকা কম্পিউটারে জমা না করে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে অনেক ঝামেলা করে ওই ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছিল। স্থানীয় আফজাল হোসেন জানান, জোর পূর্বক তার রেকর্ডীয় জমি দখল করেছেন সানোয়ার।

অভিযোগের ব্যাপারে খান মোঃ সানোয়ার হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, লোন করে বাড়ি করেছি, কোন দূর্নীতি করিনি। তবে আঃ সালাম আমার কাছে কিছু টাকা পাবেন। সালামকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বদলী করেছেন, এতে আমার কোন হাত নেই বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উজিরপুর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু জাফর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কর্মচারী সমিতির বিভাগীয় নেতা শাহীন হোসেন এবং জোনাল স্যার আঃ সালামকে বদলী করেছেন। তবে সানোয়ার ও সালামের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল। সানোয়ারের স্ত্রীর নামে গ্রামীণ ব্যাংকে কিছু লোন রয়েছে বলে স্বীকার করেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের বরিশাল জোনাল ম্যানেজার সাইদুজ্জামান ভুঁইয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ওই দুই মাঠকর্মী ওখানে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রথমে সালামকে বদলী করা হয়েছে, অতি দ্রুত সানোয়ারকেও বদলী করা হবে। প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.