সীমানা সুরক্ষা নিয়ে কোন গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না, দায়িত্ব পুলিশের : মমতা

কলকাতা প্রতিনিধি: কেন্দ্র রবিবারেই সব রাজ্যকে সীমানা সিল করার নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল সোমবার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, সীমানা সুরক্ষা নিয়ে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। এ ক্ষেত্রে কারও সুপারিশ মানারও দরকার নেই বলে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

লকডাউন পর্বে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আইন মেনে কড়াকড়ির পক্ষে সওয়াল করলেও বাড়াবাড়ি যাতে না-হয়, সেটাও দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও-সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বাংলার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের সীমানা এবং অন্য দেশের সঙ্গে বঙ্গের সীমান্ত ‘সিল’ বা বন্ধ করার বিষয়টি বুঝিয়ে দেন তিনি। সে-ক্ষেত্রে অবশ্যই ছাড় পাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর গাড়ি।

এ দিনের বৈঠকে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানান, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নাকা তল্লাশির মধ্যে গাজোলের ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়িতে করে কয়েক জন ঢুকেছেন। তবে এ-সব বললে যে আর চলবে না, তা স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারি, এর পরে এমন হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকই দায়ী থাকবেন। সীমানা সিলের মধ্যেও কাউকে কাউকে ঢোকানোর জন্য বিধায়কেরা চিঠি দিচ্ছেন বলে বৈঠকে জানান উত্তর জিনাজপুরের পুলিশ সুপার।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এক ছাতার তলায় থাকা পদ্ধতি মেনেই কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও বিধায়কের সুপারিশ না-শুনে আইন মেনেই কাজ করতে হবে পুলিশকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ চিঠি দিলে শুনবেন না। আইনের কথা শুনবেন। সীমানা দিয়ে কেউ যাতে না-আসে, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে।’’

সীমানা দেখাশোনায় যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, তাই একাধিক পুলিশকর্তাকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির সীমানা তদারক করবেন আইজি (এসটিএফ) অজয় নন্দা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারির সঙ্গে সীমানা সুরক্ষার কাজ দেখবেন এডিজি ও আইজি (সিআইএফ) অজয় কুমার। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের সীমানা সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন অশোক প্রসাদ। কোচবিহারে আনন্দ কুমার।

বর্মা পদবির এক পুলিশকর্মী বা আধিকারিকের ‘ব্যবহার’ সম্পর্কে আলিপুরদুয়ারের এসপি অমিতাভ মাইতিকে খোঁজ নিতে বলেন মমতা। যদিও ওই পদবির কোনও আধিকারিক বা কর্মীর নাম বৈঠক চলাকালীন জানাতে পারেনি পুলিশ সুপার। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বর্মা কে আছেন? খোঁজ নিন। ভাল ব্যবহার করতে বলুন।’’ পুলিশ সুপার বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘‘লকডাউনের শুরুর পর্বে একটু অন্য রকম ছিল। তবে এখন আর নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইন মেনে কড়াকড়ি হোক। আমরা নরমে-গরমে কাজ করব। কিন্তু ওটা বাড়াবাড়ি ছিল।’’ তবে বয়স্কদের ওষুধ, নিরন্নের মুখে খাবার পৌঁছে দেওয়ায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্র বলেছে, লকডাউন চলাকালীন কেউ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে পারবেন না। তবে সোমবারেও সড়কপথে কেরল থেকে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমায় পৌঁছন দুই শতাধিক শ্রমিক। তা নিয়ে ভিডিয়ো-সম্মেলনে জেলার পুলিশকর্তাদের ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই শ্রমিকদের হোম কোয়রান্টিনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইটাহার ও রায়গঞ্জে জলপথের সীমানা বন্ধ থাকলেও সড়কপথে সাইকেল নিয়ে এ-পারে জেলায় ঢুকছেন বহু মানুষ। কোচবিহারের অসম সীমানা বক্সীরহাট ও আলিপুরদুয়ারের বারোবিষায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অসমের বেশ কিছু লোক নিজের রাজ্যে ফিরতে না-পেরে কোচবিহারে আশ্রয় নিয়েছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (কলকাতা) প্রতিনিধি রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.