শমেস ডাক্তারের ২০০ সন্তান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তারের ২০০ সন্তান। তার আশ্রয়ে ২০০ জন এতিম ও বৃদ্ধ আছেন। সবাই তাকে বাবা বলে ডাকেন। এদের মধ্যে অনেকেই বয়সে তার অনেকে বড়।
জানা যায়, ২০০ জনের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া মকবুল হোসেনের বয়স ৭৫ বছর। চার বছর থেকে বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। তার অবস্থা দেখে স্ত্রী অন্যত্র চলে গেছেন। তার সাত সন্তান রয়েছে। সন্তানরা তার আট বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার পর বাড়ি থেকে বের করে দেন। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন হোটেলে কাজ করেন।
বয়সের ভারে হোটেলে কাজ করতে না পেরে এখানে সেখানে থাকতে শুরু করে। তারপর খোঁজ পেয়ে নিজেই চলে আসেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। মকবুল হোসেনের বাড়ি নাটোরের দুড়দুড়ি এলাকায়। তার ৪ মেয়ে, ৩ ছেলে রয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে তিনি শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তারকে বাবা বলে ডাকেন।
মকবুল হোসেনের মতো আরও ৬০ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১৪০ জন এতিম। এর মধ্যে ১০৩ জন ছেলে ও ৩৭ জন মেয়ে রয়েছে।
তাদের কারো বা ছেলেমেয়ে খোঁজ রাখে না, আবার কারো বা ছেলেমেয়ে উভয়ই না থাকায় তাদের আশ্রয় এখন বৃদ্ধাশ্রমে। এদের মধ্যে কারো বাবা নেই, কারো বা নেই মা, আবার অকালে অনেকেই হারিয়েছে বাবা-মা দুইজনকেই। একেকজনের জীবনের গল্প একেক রকম।
এদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেই, এদের মধ্যে কেউ পরিত্যক্তা আবার কেউ দুর্ভাগ্যক্রমে পরিবার বিচ্ছিন্ন। এদের পরিবারও নেই, আনন্দও নেই। বাড়ি যেতে চাইলেও বাড়িই তাদের শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তারের এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম।
রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এ গ্রামে গড়ে উঠেছে ১৯৮৪ সালে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন নামে ছোট্ট এতিমখানা। পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে বৃদ্ধাশ্রম। নাম দেওয়া হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধা নিকেতন।
বর্তমানে বৃদ্ধ ও এতিমের সংখ্যা ২০০ জন। এসব এতিম সন্তানরা কেউই তার নিজের নয়। ৩৪ বছরে পৈতৃক ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করে এতিমদের রক্ষা করে চলেছেন।
শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার প্রথমে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন এতিমখানা। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলায় ফোঁড়া ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ। তাদের রক্ষার্থে আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়িভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন।
এই পল্লি চিকিৎসক পরিবার নিয়ে পড়েন বিপাকে। শেষপর্যন্ত স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে উঠে আসেন এতিমখানায়। স্ত্রী মেহেরুন্নেসা শিশুদের দেখাশুনা ও তাদের জন্য রান্না করেন তিন বেলা। এখন মেহেরুন্নেসা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র।
এদিকে বৃদ্ধাশ্রমে সার্বিক আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। তিনি যতটুকু সহযোগিতা করেন, তা দিয়ে সারা বছর ২০০ জনকে পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তার পাশাপাশি আরও কেউ সহযোগিতা করলে বৃদ্ধ ও এতিমদের আর একটু ভালোভাবে রাখতে পারতেন বলে শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার জানান।
এ বিষয়ে মকবুল হোসেন বলেন, আমার আট বিঘা জমি সন্তানরা রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার পর বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর আমি বিভিন্ন হোটেলে কাজও করেছি। বয়সের ভারে কাজ করতে না পেরে কাজে আর না রাখায় নিরুপায় হয়ে এই বৃদ্ধা নিকেতনে আশ্রয় নিয়েছি। আমি বর্তমানে ভালো আছি। শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তারকে আমি বাবা বলে ডাকি।
গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বলেন, নিজের স্ত্রীর, ছেলে-মেয়ের, সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যে সহযোগিতা পাই তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাকি রাখতে হয়। বছর শেষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে থাকতে হয়। সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেতাম। বর্তমানে ৫২ শতাংশ জমির ওপর এতিমখানাটি উপজেলা সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্বে সরেরহাট গ্রামে অবস্থিত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি জি, এম হাসান সালাম (বাবুল) রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.