লোডশেডিংয়ে হারিকেন-মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান ফখরুলের

ঢাকা প্রতিনিধি: লোডশেডিংয়ের সময় হারিকেন ও মোমবাতি নিয়ে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ইস্যুতে সরকারের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ে সবাইকে হারিকেন-মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তা না হলে আমরা আলোর মুখ দেখতে পাবো না।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। এখন বিদ্যুৎ, এরপর জ্বালানি তেল, এরপর দেখবেন খাজাঞ্চিখানা শুন্য হচ্ছে, রিজার্ভ শেষ হচ্ছে। আকাশচুম্বী হয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমাবেশে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে হাতে হারিকেন নিয়ে আসা বিএনপির নারী নেত্রী ও কর্মীদের তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই হারিকেনটা গণভবনে হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দিন। তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। শুধু এই মিটিংয়ের মধ্যে হারিকেন নিয়ে আসলে হবে না। যখনই অন্ধকার আসবে, লোডশেডিং হবে, তখনই হারিকেন আর মোমবাতি নিয়ে বের হবেন। কারণ এই মোমবাতি ও হারিকেন নিয়ে বের না হলে আমরা আলোকিত হবো না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার বিদ্যুতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২২ সালে শুধু বিদ্যুৎখাতে লোকসান হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য বছর মিলিয়ে এই লোকসান ছাড়িয়ে গেছে লাখ-কোটি টাকা।
কারা এই টাকাগুলো নিয়েছে? এই প্রশ্ন রেখে ফখরুল বলেন, সামিট গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ এক বছরে ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না, বিদ্যুৎ দেয় না। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের টাকা নিয়ে চলে যায়। আরেক দিয়ে রয়েছে ন্যাশনাল, ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এছাড়াও দ্য পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিপিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এমন দশটা কোম্পানি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারাই বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শত শত কোটি টাকা নিয়ে গেছে।
‘কয়েক দিন আগেই আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রীরা হাতিরঝিলে আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসব করে ঘোষণা দিলো, দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে লোডশেডিংমুক্ত হলো। আর এখন শহরেই দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ যায়। আর গ্রামে যেখানে এখন বোরোর মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেচের দরকার, যার জন্য বিদ্যুৎ দরকার, সেখানে সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’
‘এই বিদ্যুৎ আনার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছিলো। হাজার হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের কথা ভেবে এই পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো টেন্ডার না করেই নিয়ে আসা হয়। আর এর জন্য কোনো মামলা হবে না, ইনডেমনিটি আইন তৈরি করেছে এই সরকার। এক দিকে ট্যানেল নির্মাণ করছে সরকার, অন্যদিকে মানুষের খাওয়ার টাকা নাই।’
দেশের শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দুবেলা খাবার পায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই শেখ হাসিনা সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে লুটপাট করা আর মিথ্যা বলা। গতকালই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানির ঘাটতি নেই। ঘাটতি না থাকলে সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না কেন? কেন তেল ও গ্যাস রেসনিং করা হচ্ছে?
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে টাকা ধার নেবো না। আমরা এখনো খুব শক্তিশালী অর্থনীতির মধ্যে আছি। কিন্তু কালকে আমরা পত্রিকায় দেখলাম, ৪৫০ বিলিয়ন ডলার তারা ধার চেয়েছেন আইএমএফ’র কাছে। এ সরকার অনর্গল মিথ্যা কথা বলে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বোকা বানিয়ে রাখে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা শুন্য হয়ে গেছে।
‘এখন আর অনেক দফা নেই। এখন একটাই দফা, একটাই দাবি, এই মুহুর্তে পদত্যাগ করো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সংসদ বাতিল করো এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের ক্ষমতা, তাদের হাতে ফিরিয়ে দাও। আর সময় নেই, এখনই জেগে উঠতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিবাজ সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে।’
সারা দেশে নজিরবিহীন লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আজ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টায় বিক্ষোভ শুরু হলেও সময়ের আগেই মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশের কারণে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং মৎস্য ভবন থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। এ সময় দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সদ্যপ্রয়াত সম্পাদক অমিত হাবিবের জানাজার নামাজের জন্য সমাবেশের কার্যক্রম কিছুক্ষণ স্থগিত রাখা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্যসচিব আমিনুল হক। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক সালাম, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের জেরিন খান, বিএনপি মনোনীত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তৃতা দেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.