রাবি ক্যাম্পাস সেজেছে বসন্তের সাজে

রাবি প্রতিনিধি: ফুল ফুটুক বা না ফুটুক আজ বসন্ত। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে ফুটেছে হজারো রকমের ফুল। শীতের রুক্ষতাকে হার মানিয়ে যৌবনপ্রাপ্ত দক্ষিণা হাওয়া প্রকৃতিতে তুলেছে গুঞ্জণ, যেন বসন্ত এসে গেছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে পহেলা ফাগুনের কথা। দক্ষিণা বাতাসের মাতাল হওয়ায় রাবির প্রকৃতিও মেতে উঠেছে ঋতুরাজ বসন্তের বন্দনায়। মতিহারের সবুজ চত্বরের তরুণ-তরুণীরা আজ মেতেছে দীপ্ত প্রাণের উচ্ছলতায়।

ক্যাম্পাস জুড়ে বাগানগুলোতে গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, বাতাবি লেবুসহ বাহারি ফুলে ধূলি ধুসরিত রাবি ক্যাম্পাসে বসন্তের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে। এ যেন শীতের বার্ধক্য মুছে প্রাণের সঞ্চরণ জেগেছে মতিহারের প্রকৃতিতে। বসন্তের রঙে রঙিন রাবির শিক্ষার্থীরাও। তরুণদের গায়ে বাহারি পাঞ্জাবি, তরুণীরা পরেছে বাসন্তি শাড়ি আর মাথায় ফুলের মুকুট। শিশুরাও আজ রঙীন, বৃদ্ধরাও বাসন্তী সঞ্জীবতায় প্রাণবন্ত, সজীব।

আজ বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্ত বরণ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন উৎসবের আমেজে। এ দিন সকাল থেকেই শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। দিবসটিকে ঘিড়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ, টুকিটাকি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, পশ্চিমপাড়া, আমতলা, পরিবহন মার্কেট ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। বিশেষকরে প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের পদচারণা চোখে পড়ার মত।

এদিকে পহেলা ফাল্গুনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগ আয়োজন করে এ্যালামনায় এসোসিয়েশন। এদিন রবীন্দ্র ভবনের সামনে সাংস্কৃাতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে। বসন্তকে বরণ করে নিতে ফাগুনের প্রথম প্রহরেই প্রতিবারের মত এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসব। বসন্ত বরণে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা বের করে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। চারুকলার মুক্তমঞ্চে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা উৎসব। থরে থরে সাজানো পিঠার স্টলগুলোতে সাজানো নানা রঙের নানা স্বাদের পিঠে-পুলি।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলবেঁধে সেখানে তরুণ-তরুণীরা ভিড়। অনেকে এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। শুধু রাবির শিক্ষার্থীরাই নয়, বাইরের তরুণ-তরুণীরাও এসব অনুষ্ঠান-আয়োজনে এসে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা।

হলুদ রঙ্গের সাড়ি এবং মাথায় ফুলের মুকুট পরে ঘুড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মা আফসানা সূচির কাছে বসন্ততের অনূভতি জানতে চাইলে মিষ্টি কথায় বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাবিতে কোনো উৎসব মানেই সেটা রঙিন আর জাঁকজমকপূর্ণ হবে। তাই এ ধরণের উৎসবগুলোতে প্রিয় মানুষকে নিয়ে উপভোগ করি এখানকার প্রত্যেকটি আয়োজন।

অন্যদিকে, বসন্তবরণ উৎসবে সমানতালে উচ্ছ্বসিত রাবির বিদেশী শিক্ষার্থীরা। রাবির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের পড়–য়া জর্ডান শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন আব্দুল কাদির বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাবিতে উৎসবগুলো খুব ধুমধাম ভাবে পালিত হয়। এই বসন্ত বরণ উৎসবে বাঙালি জাতির মানসম্মানের পরিচয় পাওয়া যায়। এই আয়োজনগুলো খুব ভালো লাগে, উপভোগ করিও বেশ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তবরণ উৎসবকে ঘিরে রাবির নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য আর অবাক মুগ্ধতা। পাঞ্জাবি-শাড়ি পরে বন্ধুরা মিলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুড়তে দেখা যায়। নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অনামিকা ও অপরুপ বসন্তের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, এর আগে এ ধররেন দিবসগুলো এত বড় পরিষরে উদযাপন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এ ধরনের উৎসবগুলোর সাথে নতুনকরে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়েছে। যা দেখছি তাতেই বিমোহিত হয়ে যাচ্ছি। প্রাণভরে উপলব্ধি করছি আজকের এ বসন্ত উৎসব।’

বসন্তের এ আমেজ শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। আনন্দে মেতেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

রাবির নৃবিজ্ঞন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম ফারুক সরকার আবেগে আপ্লুত হয়ে বিটিসি নিউজকে বলেন, ছাত্র জীবনে এ উৎসবগুলো জমকালো ভাবে উদযাপন করেছি। এখন কর্মজীবনে এসে উৎসবগুলোতে আগের মত অংশগ্রহন করা হয়ে ওঠে না। তবে এতকিছুর মধ্যদিয়েও এসব উৎসব পালনের মধ্যদিয়ে বাঙ্গালি জাতির ঐতিহ্য ধরে রাখবার চেষ্টা করি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.