রাজশাহী নগরী থেকে বিলিন হয়ে গেছে খেজুর গাছ, রসের জন্য গ্রামঞ্চলই ভরসা!


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরী থেকে বিলিন হয়ে গেছে খেজুর গাছ। রসের জন্য গ্রামঞ্চলের থেকে বিক্রি করতে আসা খেজুর বিক্রেতাদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে শহরের মানুষদের।
শীতের শুরু থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়েছে। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও গাছিরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন। শীত আসলেই খেজুর গাছ খুঁজে বেড়ান গাছিরা। এরপর গাছ কেটে পুরো মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে, রাস্তার পাশে তাল ও খেজুরের গাছ ছিল। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। তাই আগের মত তেমন রস সংগ্রহ করতে পারেন না গাছিরা।
রাজশাহী নগরীর উপকন্ঠ কাটাখালী, কাপাসিয়া, খড়খড়ি, উপজেলার পবা থানার গ্রামের গাছি খুতনা বলেন, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসিতে (মাটির পাত্র) রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই আমরা কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করি।
প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) গাছে বাঁধি, সকালে রস সংগ্রহ করি। কেউ কেউ কাঁচা রস শহরের বিভিন্ন বাজারে, পাড়া মহল্লায় বিক্রি করে। আবার গ্রমঞ্চলে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন।
নগরীর উপকন্ঠ হরিয়ান এলাকার সোহেল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। বাড়তি জনসংখ্যার কারণে মানুষ এখন গাছ কেটে বসত বাড়ি তৈরি করছে।
কাজলা এলাকার খুতনা গাছির ছেলে জাদু বলেন, খেজুরের রস দিয়ে নানান রকম পিঠা তৈরি করা হয়। খেজুর গাছ ৫-৬ বছরের হলেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করা যায়। কার্তিক মাস থেকে ফাগুন মাস পর্যন্ত রস আহরণ করা হয়। তবে যত শীত বেশি পড়ে গাছ থেকে তত বেশি রস পড়ে।
রাসিক সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশরাফুল হাসান বাচ্চু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কালের পরিবর্তনে রাজশাহী মহানগরী তথা কাজলা থেকে বিলিন হয়ে গেছে খেজুর গাছ। আগে রাস্তার ধারে ড্রেনের ধারে সারিবদ্ধ ভাবে খেজুর গাছ দেখা যেত। ওইসব গাছ গুলি থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করে পাড়া মহল্লায় বিক্রি করতো। শিত আসলেই খেজুর রসের চাহিদা দেখা যায়। এখন সেই স্বুসাদু খেজুর রস কেনার জন্য জেলা-উপজেলার গাছিদের সংগ্রহ করা রসের উপর নির্ভর করতে হয় শহরের লোকজনদের।
কাউন্সিলর আরও বলেন, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে পতিত জায়গায় ও রাস্তার ধারে খেজুর গাছ লাগানোর বিকল্প নাই। তাই তিনি নগরবাসীকে এই উদ্দ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
রাজশাহী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আগে পতিত জমি ছিল। সেখানে অবহেলা অযতেœ খেজুর গাছ জন্মাত। গ্রামীণ রাস্তার পাশেও সারিবদ্ধভাবে খেজুরগাছ দেখা যেত। সেসব গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতো। ওই খেজুর গাছ থেকে বাংলার নবান্ন উৎসবের জন্য গাছিরা খেজুর রস আহরণ করতো। মানুষের মধ্যে অসচেতনতার কারণে মানুষ গাছ কাটলেও গাছ আর লাগায় না। অন্তত পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষায় প্রতিটি সড়কের পাশে ও খালি জায়গায় খেজুরগাছ লাগানো উচিত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.