রাজশাহী অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন দাম নিয়ে হতাশায় কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলে বেশিরভাগ এলাকায় আমন ধানের কাটা মাড়াই শেষ। কৃষকরা ঘরে তুলেছেন ধান। এবছর রাজশাহী অঞ্চলে আমন ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন কৃষক।

কৃষকরা বলছেন, এভাবে ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর লোকসান হলে ধান চাষাবাদ বন্ধ করে দিতে হবে। ধানের দাম কম হওয়া সত্ত্বেও সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ধান ক্রয় করা হচ্ছে না। আবার যা ক্রয় করা হচ্ছে তা-ও প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় না করে অকৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। এভাবে লোকসানে পড়ছে প্রকৃত কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট ৩ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে এই চার জেলায়। এবছর এই চার জেলায় ধান উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে নওগাঁ জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে- ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। আর রাজশাহী জেলায় মোট ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বিটিসি নিউজকে জানান, রাজশাহী অঞ্চলে ৯৯ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে বলা যায়, এবছর এই অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজশাহীতে মোট ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এসব ধান উৎপাদন করেছেন জেলার ১ লাখ ৬০ হাজার আমন চাষী। আর সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হচ্ছে ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকদেরদের বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অধিদফতর থেকে জানা যায়, রাজশাহীতে ২৬ টাকা কেজিতে ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় ৩ মেট্রিক টন, গোদাগাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৯৮, তানোর উপজেলায় ২ হাজার ৪০০, পবা উপজেলায় ৯৮৯, মোহনপুর উপজেলায় ২৮৮, বাগমারা উপজেলায় ৮৩, দুর্গাপুর উপজেলায় ৫৬৮, পুঠিয়া উপজেলায় ৬২৮, চারঘাট উপজেলায় ৪৫৩ ও বাঘা উপজেলায় ১৪০ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে।

কৃষকরা বলছেন, বাজারে ধান মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ধান বিক্রি হওয়া উচিত ৯০০ টাকা মণ দরে। তবেই কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে। কিন্তু ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে ধান বিক্রি হওয়ায় লোকসান দিয়েই তাদের ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই ধান উৎপাদন হয়েছে।

দুর্গাপুর প্রতিনিধি বিটিসি নিউজকে জানান, উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানিয়েছে, এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৪ হাজার ৬৬৪ মেট্রিকটন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় কৃষক রয়েছেন প্রায় ৭ হাজার জন। দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের ধানচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, সাধারণত খরচের সাথে বিবেচনা করলে ধানের দাম কম। কৃষক হিসাবে ধান উৎপাদন করে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে দাম পাওয়া যায় না। বাজারে ৭০০ থেকে ৭৫০টাকা মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দামের কারণে আগামিতে কৃষকের অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে যাবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.