রাজশাহীতে যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কিত একদিনের কর্মশালা

বিটিসি নিউজ ডট কম ডট বিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘নেতৃত্ব চাই যক্ষ্মা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে’ স্লোগান নিয়ে রাজশাহী মহানগরীতে যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কিত একদিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবন সম্মেলন কক্ষে সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসন বুলবুল প্রধান অতিথি হিসেবে এ কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বুলবুল বলেন, যক্ষা একটি ছোয়াছে এবং সংক্রামক রোগ। এ মহানগরীতে যক্ষ¥া কোনভাবেই যেন বিস্তৃতি লাভ করতে না পারে সেজন্য আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজশাহী মহানগরী থেকে চিরতরে যক্ষা নির্মূলে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আহবান জানান মেয়র।
তিনি আরো বলেন, রাজশাহী সিটিকে হেলদি সিটি, গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি ও এডুকেশন সিটিতে পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান পরিষদ। স্বাস্থ্য সেবায় ইপিআই, পরিবেশ, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের যে অর্জন তার ধারাবাহিকতা রাখতে চাই। এজন্য চাই সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা।
তিনি বলেন, যক্ষ্মা এমন একটি রোগ বিগত দিনে যার প্রবাদ ছিল যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। এখন তা অনেকটা ম্লান হয়েছে। আমাদের সচেতনতা এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। তবে দেশের দ্রুত নগরায়নের ফলে প্রবৃদ্ধিও ঘটেছে। একই সাথে এই নগরায়নের ফলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে যার মধ্যে যক্ষ্মা অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি।
তিনি বলেন, দেশে নগরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত উচ্চ হারে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, বায়ু চলাচলের সুযোগ কম এমন আবদ্ধ স্থানে বহু মানুষের বসবাসের অবস্থা, পুষ্টির অভাব এবং মানুসের সহজ চলাচল ইত্যাদি নগর অঞ্চলগুলো অনেক বেশী। এসব কারণেই নগরাঞ্চলগুলোতে যক্ষ্মার জীবাণু খুব সহজেই একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। নগরীর জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় রাসিক কর্তৃক নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এই সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে প্রেসক্রিপশন করে ওষুধ সেবন এবং জনগণকে এই বিষয়ে সচেতন করার জন্য উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মীদের নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।
বাংলাদেশ কার্যকরভাবে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ত্বরান্বিত করতে এই কর্মকা-ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং স্থানীয় সরকার), উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, সুশীল সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ একযোগে কাজ করার আহবান জানান মেয়র। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত সিটি হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য ‘জিরো টিবি সিটিজ ইনিসিয়েটিভ’ প্রজেক্টের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও কর্মশালার মূল আলোচক বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, রাজশাহীর সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যক্ষ্মা আজও একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে বিরাজ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩ লাভ ৬২ হাজার নতুন যক্ষ্মা সংক্রমণ ঘটে এবং ৬৬ হাজার মানুষ মারা যায়। তাই নিদারুণ ভোগান্তি এবং উচ্চ মৃত্যুর হারের কারণে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য খাতের একটি উচ্চ অগ্রাধিকার কার্যক্রম। ২০১৭ সালে সারাদেশে সর্বমোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে যা মোট অনুমিত রোগীর প্রায় ৬৭% এখনও প্রায় ৩৩% রোগী চিকিৎসা আওতার বাইরে রয়েছে। যক্ষ্মা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবনের জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, কোর্স সম্পূর্ণ না করলে যক্ষ্মা কোনদিন ভাল হবেনা। আর যক্ষ্মা জীবানু দেহে থাকলে আরো নানা প্রকার রোগ শরীরে বাসা বাধবে এবং নিশ্চিত মৃত্যু হবে বলে তিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। সেইসাথে দুই সপ্তাহের বেশী কাশি ও শরীরে জ্বর থাকলে কাশি পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
নগরীতে যক্ষ্মা বিষয়ে আমাদের জাতীয় কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নগরাঞ্চলকে যক্ষ্মামুক্ত করতে জিরো টিবি সিটিজ ইনিসিয়েটিভ কার্যক্রম বাস্তবায়নে রাসিকের স্বাস্থ্য কর্মীদের সমন্বয়ে যক্ষ¥া বিষয়ক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মোমিনের সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এফএএম  আঞ্জমান আরা বেগম। কর্মশালায় যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কিত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন চ্যালেঞ্জ টিবি প্রজেক্ট রাজশাহীর বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোহাম্মদ কায়কুজ্জামান। চ্যালেঞ্জ টিবি বাংলাদেশ আয়োজিত কর্মশালায় জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগী সংগঠন ব্র্যাক, ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন, তিলোত্তমা, রিক, বাডাসের প্রতিনিধিসহ রাসিকের স্বাস্থ্যকর্মীগণ অংশ নেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.