মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২ আসামী গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিনিধি: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার এবং মোখলেসুর রহমান মুকুলকে রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞ আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা রুজু হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তী সময় ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত দুইজন আসামি রায়ের আগে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে এবং ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন। র‌্যাব বর্ণিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বলেন, গত রাতে র‌্যাব-২-এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া এলাকা থেকে নকিব হোসেন আদিল সরকার (৬৯) এবং মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলকে (৬৭) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নকিব হোসেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নকিব হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়।
র‌্যাব বলেছে, নকিব হোসেন ২০১৫ সালে মামলার তদন্তকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে ময়মনসিংহের নিজ এলাকা ত্যাগ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে এবং একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করে। সর্বশেষ সে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকায় বসবাস করে আসছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে সে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত।
এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। সে এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগমস্থল, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।
এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বলেন, গ্রেপ্তার মোখলেছুর রহমান মুকুল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে। সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
মোখলেছুর রহমান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। মোখলেছুর রহমান ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে আত্মগোপনে চলে যায়।
পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার আশুলিয়ার ইপিজেড এলাকায় বিভিন্ন ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে সে একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেছে। এ সময় সে তার এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখত।
তার ছেলেমেয়েরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.