বাগেরহাটে ঈদের আমেজ নেই উপকুলের নিম্ম আয়ের মানুষের

বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঈদের আমেজ নেই উপকুলের নিম্মআয়ের মানুষের। একদিকে প্রানঘাতি নভেল করোনা ভাইরাস অন্যদিকে সুপার সাইক্লোন আম্পান ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারনে উপকুল বাসির মনে নেই কোন ঈদ আনন্দ। বছর শেষে একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো ঈদু ফিতরের ঈদ উৎসব। এবার বিধাতা যেন সব কিছু ম্লান করে দিয়েছে নিম্মআয়ের মানুষের ঈদের আমেজকে।

‘নিজের নতুন জামা কাপড় কেনা ও সন্তানদের কিনে দিতে না পারা যেন পিছনের দিনগুলোর স্মৃতিকে মনে করে কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলা। এরকম কোনদিন হয়নি, প্রতিবছর কাজকর্ম করে উপার্জিত টাকা দিয়ে পরিবারের সবাইকে নতুন জামা-কাপড়সহ চিনি সেমাই রান্না করে প্রতিবেশিদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে নিজেকে আনন্দবোধ করতাম। এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার বগী-সাতঘর গ্রামের বাসিন্ধা জেলে কামাল হাওলাদার।

তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে একমুঠ চিড়া ও পানি খেয়েছি, ঘূর্নিঝড় আম্পানের সময় আশ্রয়কেদ্রে থাকা অবস্থায় যে চিড়া দিয়েছিল, তা থেকে যা রয়েছে তাই খেলাম। আমাদের আর কষ্টের সীমা নেই। এপ্রিল মাসে একটা ভিজিডি কার্ড দিয়েছে, তা থেকে একবার ৩০ কেজি চাউল পেয়েছি। এছাড়া কোন ত্রান পায়নি। কারন ভিজিডি কার্ড থাকলে নাকি অন্যকিছু সহয়োগিতা পাওয়া যায় না। কর্মহীন হয়ে থাকার চার জনের সংসার কিভাবে চলছে, নিজেই জানিনা। এছাড়া ঝড়ে ঘরের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ভাঙগা ভেড়িবাধ থেকে জোয়ারের পানি বাড়িতে ওঠা নামা করায় আরও দুর্ভোগে ফেলেছে।

একই গ্রামের করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া নিন্ম আয়ের মানুষ ফুলমিয়া, মাহবুব, মিজান ও মমিন উদ্দিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এভাবে ঈদের দিন কাটবে কোনদিন বুঝতে পারিনি। না পারলাম নতুন জামা-কাপড় কিনতে না পারলাম ছেলে মেয়েদের দিতে। ছেলেমেয়েদের দিক তাকালে নিজেকেও বুঝাতে পারছি না। তারপরও সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছি। এছাড়া নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের পাশে বাস করার কারনে প্রতিবছর ঝড় বন্যায় যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিবছর ঈদের আগে ১০ কেজি করে সরকার চাল দিতো । এবার দেয়নি, ঈদে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।

স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দা বলেশ্বর নদীর কোল ঘেষে বসাবস। আমার ওয়ার্ডে ৭শ খানা রয়েছে। ৮০ শতাংশ জেলে সম্প্রদায়। এসব পরিবারে লোকসংখ্যা তিন হাজারের উপরে। করোনা ও ঝড়ের কারনে এবার ঈদে নতুন পোষাক তো দুরে থাক, সবমিলিয়ে ২৫-৩০ টি পরিবার সেমাই রান্না করেছে।বাধঁ বাঙায় জোয়ারের লবণ পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার দূর্ভোগে রয়েছে। বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার গাবতলা, তেরাবেকা, রায়েন্দা, সাউথখালী গ্রামসহ একই অবস্থা বিরাজ করছে উপকুল জুড়ে ।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর বাগেরহাট জেলার ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, সমপরিমাণ পরিবারকে নগদ ৯২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, আট হাজার ৩৮০ শিশুর জন্য খাদ্য কেনার নগদ ১৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

“এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে জেলার অসহায় ৭৫ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আড়াই হাজার টাকা করে দিয়েছেন; যা অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন।”

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তালিকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা শাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর দিন থেকে সরকারের যে বিদ্যমান মানবিক সহায়তা রয়েছে তা ঈদের আগেই আরও জোরদার করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস ও ঝড়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,“স্বাস্থ্যবিধির কারণে সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.