পলাশবাড়ীতে কার্তিকের মঙা দুর করতে আশার আলো জাগিয়েছে ব্রিধান- ৪৯, ৭১-৭৫ আগাম জাতের ধান 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় আগাম ধান চাষে যেমন মঙা দুর হয়েছে পাশাপাশি গোখাদ‍্যের সংকটও আর নেই। আগাম জাতের এসব ধান স্বল্প মেয়াদি জীবনকাল, সার-পানি সাশ্রয়ী, আলোক সংবেদনশীল, উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন ও খরাসহিষ্ণু হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। 
অগ্রহায়ন মাস আসতে এখনও অনেক বাকী। আশ্বিন মাস শেষ। অগ্রহায়ন মাসের জন্য আর ক্ষন গণনার অপেক্ষা নয়। চলতি সময়েই গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এসব ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় কৃষকদের মুখে দেখা দিয়েছে হাঁসির ঝিলিক।
কৃষকদের ধান কাটার সাথে সাথে কৃষকবধুরাও থেমে নেই। ধান কেটে বাড়ী আনার পর ধান ছাড়ানো, শুকিয়ে ঘরে তোলা এ কাজ কৃষক বধু ও মেয়েদের।
আগাম আমন ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে ভাল। কৃষকরা বলছেন আগাম আমন চাষে কার্তিক মাসের মঙ্গা উধাও হয়ে গেছে। ধানের দাম ভাল থাকায় চাষীদের মন উৎফুল্ল দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে মজুরি বেশি থাকায় কৃষি শ্রমিকেরা রয়েছে চাঙ্গাভাবে। ধান কাটা মাড়াই করতে কৃষি শ্রমিক পাওয়াই দুস্কর হয়ে পড়েছে। দিন হাজিরায় তিনশত টাকা  থেকে তিনশ ৫০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা।
পলাশবাড়ী উপজেলায় আগাম জাতের ধানের চাষ হয়েছে ৯ ‘শ ৯০ হেক্টর জমিতে। এবারের আমন আবাদের শুরুটা মোটেও ভাল ছিল না। প্রথম থেকেই কৃষকদের মধ্যে ছিল শঙ্কা।
প্রথমত পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব, দ্বিতীয়ত অকাল বন্যা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের মাথায় পড়েছিল হাত। আমনের যে টার্গেট তারা করেছিল তা পূরণ না হওয়ার শঙ্কাই দেখা দেয়।
বর্ষাকাল পেরিয়ে যাওয়ার পর আকাশে কালো মেঘের আনাগোনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার পর বন্যার আঘাত। সব কিছু মোকাবেলা শেষে মাঠ ঘুরে দেখা যায় আমনের ফলন এবার ভালই হবে।
তবে বিভিন্ন আগাম ৪৯, ৭১ ও ৭৫ জাতের ধান ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফলন দিতে পারে তা অবাক করে দিয়েছে কৃষকদের।
দিন মাস বছর যতই পার হচ্ছে ততই যেন নতুন নতুন আগাম জাতের আমন ধান কৃষকদের উজ্জিবিত করছে। রোপা আমন মৌসুমে ব্রিধান- ৪৯, ৭১ ও ৭৫ জাতের ধান চাষে উপজেলার কৃষকেরাও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
পলাশবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩ হাজার ৫ ‘শ ৭০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ব্রিধান-৩৪ দুইশত ৪৩ হেক্টর, ব্রিধান- ৪৯ ছয়শ ৯০ হেক্টর, ব্রিধান- ৫১ তিনশ ৫০ হেক্টর, ব্রিধান-৫২ চারশ ৩০ হেক্টর, ব্রিধান-৭১ দুইশ ১০ হেক্টর, ব্রিধান-৭৫ নব্বই হেক্টর, ব্রিধান-৮০ পঁচিশ হেক্টর, ব্রিধান-৮৭ ত্রিশ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
ব্রিধান- ৪৯, ৭১ ও ৭৫ জাতের ধানে পানি কম লাগে। এ জাতের ধানে ইউরিয়া সার এক-তৃতীয়াংশ ও সেচ ৫০ শতাংশ কম লাগে। ধানের জীবনকাল ১১০-১১৫দিন। ফলন আশাব্যঞ্জক হওয়ায় কৃষকের জন্য এ জাতের ধান চাষ খুবই লাভজনক।
প্রতি বিঘায় প্রায় ১৮ থেকে ২০ মণ ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য ধানের তুলনায় আবাদে ২-৩ হাজার টাকা খরচ কম হয়।
কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বড় শিমুলতলা গ্রামের মৃত, আব্দুর রহমানের ছেলে কৃষক দুলা মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, একবিঘা জমিতে ব্রিধান-৭১  জাতের ধান রোপণ করেছেন। এ জাতের ধান চাষে সেচ, সার, ঔষধ ও পানির খরচ অনেকটাই কম। আগে স্বর্ণা-৫ জাতের আবাদ করতাম। সে তুলনায় বিঘাপ্রতি আমার ২-৩ হাজার টাকা খরচ কম পড়েছে। আমার কাছে ব্রিধান-৭১ জাতের ধান চাষ লাভজনক এবং কৃষকদের আশার আলো দেখাচ্ছে। অনেকেই এখন এ ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
বেতকাপা ইউনিয়নের পূর্ব নয়নপুর খামার নড়াইলের ব্লকের আনছার আলি আকন্দের ছেলে কৃষক নুরুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি ব্রি-৭৫ জাতের ধান চাষ করেছি ৫০ শতাংশ জমিতে। নতুন এজাত সম্পর্কে তেমন কিছু গুনাবলি বিষয়ে জানতাম না। বিএস এর পরামর্শে এ ধান চাষ করে এর  ফলনও ভালো দেখছি। বাস্তবে দেখলাম ব্রিধান-৭৫ জাতের ধান স্বল্প সময়ে আবাদ হয়েছে।
হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুকজামিরা কিশামত কেওয়াবাড়ী গ্রামের আব্দুস ছামাদ প্রধানের ছেলে কৃষক রাশেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এক বিঘা জমিতে ব্রিধান-৭১ আবাদ করেছি।এ ধান কাটার পর রবিশষ্য রোপণ করা হবে। যে জমিতে দুই ফসল হতো সেখানে এখন তিন ফসল করা সম্ভব। আগামীতে এ জাতের ধান চাষ নিজে লাগানোর পাশাপাশি আশপাশের সবাইকে উদ্বুদ্ধু করব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফাতেমা কাউসার মিশু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ব্রিধান- ৪৯, ৭১ ও ৭৫  একটি স্বল্পমেয়াদী জাতের ধান। খরাসহিষ্ণু (৩০ শতাংশ পানি কম প্রয়োজন)। ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে কাটা যাবে এবং আশানুরুপ  ফসল পাওয়া যায়।এ জাতের ধান চাষে এখন তিনটি ফসল সম্ভব। স্বল্প জীবনকালীন হওয়ায় ধান কাটার পর ওই একই জমিতে কৃষক সরিষা/মসুর/আলু চাষ করতে পারবেন। পরে জমি তৈরি করে বোরো ধান লাগানো যাবে। এব‍্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধু করণে প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে এবং প্রকল্প অনুসারে কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.