নিয়তির কাছে জীবন সঁপে ‘নদীর কাছে

নাটোর প্রতিনিধি: সুখের দিনগুলো যেনো আচমকাই দূরে চলে গেলো নাটোরের ইছাহাক সরকারের। কর্মক্ষম মানুষটির ছিলো মাথা গোঁজার ঠাঁই, ছিলো যৎসামান্য জীবিকার ব্যবস্থাও। তবে নিয়তির নির্মমতা সব কেড়ে নিয়েছে তার। এখন তাই নিয়তির কাছে জীবন সঁপেছেন ইছাহাক আলী।

নাটোরে গুরুদাসপুর উপজেলার গুরুদাসপুর পৌর এলাকার গাড়িশাপাড়া মহল্লা নিবাসী ছিলেন ইছাহাক সরকার। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সুখের সংসার ছিলো। এক শতাংশ জায়গায় দুটো ঘর ছিলো। দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ভালোভাবেই। হঠাৎ একদিন পায়ের মাংশপেশীতে টান লেগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অসুস্থ হয়ে ঘরে থাকলে জুটবেনা খাবার তাই চিকিৎসার জন্য খুব অল্প টাকায় বিক্রি করে দিলেন জমি-বাড়ি।

একটি ঘর ভাড়া করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকা শুরু করলেন আর জমি বিক্রির টাকায় চলতে থাকলো চিকিৎসা। দুই মাস চিকিৎসা করতেই শেষ সব টাকা। দুবেলা খাবার জোগাড় করাই যখন কঠিন হয়ে দাঁড়ালো তখন ভাড়া ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিলেন নন্দকুঁজা নদীর পাড়ে।

নদীর উপর নির্মিত সেতুর নীচের ছোট্ট একটি পাকা জায়গায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তাঁবু বানিয়ে বসবাস শুরু করলেন ইছাহাক সরকার। বর্তমানে নদীতে বড়শি ফেলে ধরা মাছ বিক্রি করে দিন গুজরান করেন ইছাহাক সরকার। মাছ না মিললে স্ত্রী আমেনা বেগমকে অন্যের বাড়িতে কাজ বা ভিক্ষা করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।

ইছাহাক সরকার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, “আমার শেষ সম্বলটুকুও চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ। ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। খুব আস্তে চরাফেরা করি। নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করি। মাছ না উঠলে চুলায় হাঁড়ি চলে না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে নদী পাড়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়। আমায় কেউ সাহায্য করেনি আজ পর্যন্ত।”

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, “ঠিকমতো হাটাচলা করতে না পারায় কাজ মেলে না ইছাহাকের। ফলে কখনো কখোনো অভুক্ত অবস্থায় রাতে ঘুমতে হয় তাদের। তার সন্তানদুটোও খুব কষ্ট করে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি তার জন্য কিছু করেনি। প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তাকে যেনো একটু থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।”

স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামছুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, “ইসাহক অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাকে যতটা পারি সহযোগিতার চেষ্টা করবো। স্থানীয় বিত্তবান ব্যক্তিদের অনুরোধ করবো তাকে যেন হালকা কাজ দিয়ে সহযোগিতা করেন।”

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.