ধার্মিকের ধর্মীয় পরিচয়ঃ ধর্ম, ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মপালনের ছায়ায় পরিচয় নির্মাণ

লেখক: সাজ্জাদ হোসেন: জাতীয় পরিচয় পত্রে ধর্মের নাম ইসলাম, সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান লিখলেই যদি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হওয়া যেত তাহলে জাহান্নাম/নরক সৃষ্টির কি দরকার পড়েছিল স্রষ্টার? সবাই তো জান্নাত/স্বর্গে যেত বিনা-পাসপোর্ট, ভিসায়। তাহলে “জাগতিক পাপিষ্ঠ ” বা ধর্মের ভাষায় অভিশপ্ত কারা??
বর্তমানে সমাজে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেই কিছু মানুষ এই বিশৃঙ্খলার এক-অংশ দায়ভার নিজ দায়িত্বে ধর্মের উপর বন্টন করে দেন।
সেকুলারিজম বা ধর্মে-নিরপেক্ষবাদীরা পচার করেন ধর্ম হলো বিশ্বাসের ব্যাপার এই বিশ্বাস এর ভিত্তি হলো আধ্যাত্মিকতা। ধর্ম কি শুধু বিশ্বাসের ব্যাপার?  ফারাও সম্রাট ফেরাউন এর “খোদা” দাবি করার ব্যাপারটা খেয়াল করলে বিষয়টা পরিস্কার হবে। রাজ্যে যখন খরা/অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির মত বিপদ গুলোতে সে স্রষ্টার কাছে মাথানত করতো আর বৃষ্টি চাইতো আর ফেরাউনের চাওয়া অনুযায়ী কাজ নইলে সে জনসম্মুখে নিজেকে “খোদা” দাবি করতো। তার স্রষ্টায় বিশ্বাসে ঘাটতি ছিল?
ক্রিয়াবাদীরা বলেন ধর্মে বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসকেন্দ্রিক লিপিবদ্ধ আচার অনুষ্ঠান পালন। এই কাজ করলেই কি সে ধার্মিক হবে? ধর্মের পূজারিদের মধ্যে ধর্মের বিপথগামী লোকের সংখ্যা বেশি। ইসলাম তো দৌদ্দশত বছর পূর্বে ঘোষণা দিছে এক শ্রেনীর আলেম আগে জাহান্নামে যাবে। কোন জীব হত্যাকারী কি প্যাগোডায় যায়না? ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান যারা যিশুকে চিনেই না তারা গির্জায় যায় না?আর গিয়েও বা কি বলেন? তারা কি পুরোপুরি পূর্বের ধর্ম ভুলে যান? কোন মুশরিকর বা এতিমদের সম্পত্তি ফাকি দেওয়া লোক কি মসজিদের সামনের সারিতে নামাজ আদায় করেনা? এসব প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হ্যা।
তাহলে বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করে আবার অধার্মিকতাও করতেছে সমান তালে এদের কি আপনি ধার্মিক বলবেন? আমি মনে করি যাদের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে উপরে তারা ধার্মিক না। এসব বিপথগামী এবং নিজেদের ধার্মিক দাবি করা লোকেরা ধর্মের মানবিকতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেন।
তাহলে প্রশ্ন আসে ধর্ম কি। আমি মনে করি “
ধর্ম হল ধর্মগ্রন্থে ফায়সালাকৃতভাবে স্রষ্টায় বিশ্বাস আর ধর্মগ্রন্থ অনুসারে পালিত আচার অনুষ্ঠান যার উপরে অনুসারীদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিশ্বাস পুঞ্জিভূত থাকে”।
হুটহাট নিজেদের মুসলমান দাবি করবেন আবার জবানের দাম নেই তাহলে কি আপনি প্রকৃত  মুসলমান? এই ধরেন, নিজেদের জবানের উপর বিশ্বাস না থাকায় জমি বন্ধকে ডিড করেন(যদিও বন্ধকের বর্তমান নিয়ম ধর্ম অনুমোদন দেয়না), সব কিছুতে এত চুক্তিনামা তাহলে জবান দিয়ে যে ধর্ম স্বীকার করেছিলেন স্রষ্টার কাছে তাহলে তার চুক্তি নামা কই? প্রতিটা ধর্মের অনুসারীদাবি করা যায়, অনুসারীর খাতায় নাম লেখানো অত সহজ না, ধর্মীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা দরকার।
সব ধর্মই মানবিক। ধর্মের আশ্র‍য়ে কিছু মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে একই সাথে ধর্ম ও অধর্ম পালন করতে পারেনা তারাই সব ধর্মের সুবিধাবাদী অনুসারীদের কাছে একটা “মানবতার” ধর্ম নামে একটা খিচুড়ি উপহার দিতে চান যাতে ধর্মের সব চাইতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আধ্যাত্মিকতা অনুপস্থিত।
দিনে দিনে এই প্রথা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ধারণা করা যায় কারণ এখানে ইচ্ছা মত বিধান বানানো যাবে নিজস্ব বিধান না থাকায়। সমাজের কর্তাব্যক্তিরাই এই মানবিকতা প্রথার মানবিক স্বার্থান্বেষী স্রোতের মাধ্যমে মানবতার নদীকে বড়লোলী “অমানবিকতার” সাগরে ফেলতে প্রস্তুত সর্বদা।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সব ধর্মই যদি মানবিক হয় তাহলে ধর্ম যুদ্ধ কেন হয় দুটি বা ততোধিক ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে। ধর্মগুলো যেমনটা মানবিক ঠিক তেমন আত্নকেন্দ্রীক।
সব ধর্মই চায় তার বিজয়ের পতাকার তলে চলে আসুক সমগ্র পৃথিবী যেমনটা জাতিরাষ্ট্র চায় তার সীমানার ভিতরে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে ধর্মের সত্য বানীর মাধ্যমে বিশ্বায়নের মত এক ছাতার নিচে এনে শান্তির পৃথিবী গড়ে তুলতে চায় ধর্মগুলো। ধর্মের বানী প্রচার ও অনুসারীদের মধ্যে যখন বিপরীত মুখী কার্যক্রম দেখা যায় তখনই বেধে যায় ধর্মীয় সহিংসতা।
কখনো ধর্মের আদিমতা, গ্রহনযোগ্যতা,সত্য,তুলনামূলক বেশি বাস্তব ও কল্যাণকর, পারলৌকিক মুক্তির ইস্যু নিয়েও যুদ্ধ লেগে যায়। এই সকল ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধর্মের উচু-নিচু অবস্থান প্রমাণ করতে চায় ধর্মে বিশ্বাসীরা। এবার ধর্ম যুদ্ধের সম্ভাবনার একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
একটা দেশে যদি মুসলিম আর বৌদ্ধদের সংখ্যা খুব বেশি তারতম্য না থাকে তাহলে কি হতে পারে!!  একদিকে মুসলমানদের ত্যাগের মহান মহিমান্বিত ইতিহাস কুরবানি অন্যদিকে বৌদ্ধদের জীবহত্যা মহাপাপ। এখন যদি এই দুটি ধর্মের অনুসারীদের এক পক্ষ ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব কায়েক করতে চায় তাহলে ধর্ম যুদ্ধে শহীদ হয়ে পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা কে হাতছাড়া করতে চাইবে যেখানে ইহকালটা যেকোনো সময় শেষ হতে পারে।
যারে তারে ধার্মিক বানায়ে ধর্মের নামে অপবাদ রটিয়ে ধর্মীয় হীনমন্যতা ও ধর্মীয় অস্থিরতা মানবিকতাকে বিপদের মুখে ফেলে দেয়।
মসজিদের ঈমাম,গির্জার পাদ্রী, মন্দিরের পুরোহিতযে সে কথার নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি?  ঈমামের আমলনামায় যদি শিরক থাকে, পাদ্রীর যদি পুনরুত্থানে বিশ্বাস না থাকে তাহলে ভেবে দেখুন?
চলমান পৃথিবীতে অশান্তি আসবে স্বাভাবিক। সেটা কোন না কোন ধর্মের লোক করতেই পারে। এক্ষেত্রে ভেবে দেখার জন্য সুপারিশ থাকলো তার বিচারের সময় দেখে নিবেন সে নামে মাত্র ধার্মিক নাকি ধর্মের সাথে তার শুধুমাত্র সামাজিক পরিচয় ছিল, ধর্মের সাথে তার আত্নার সাথে কোন যোগাযোগ আছে কি দেখে নিবেন। ধর্মের ক্ষেত্রে যারা পুরোপুরি ধর্মীয় বিধান আর ধর্মগ্রন্থ অনুসারে চলে তারা মার্জিত আচরণের হয়, এটা সব ধর্ম দাবি করে একটু মিলিয়ে নিয়েন।
আর চলমান অশান্তি যদি কোন নাস্তিক করে থাকেন তাহলে আর একদিন আসবো পরবর্তী কোন অনুচ্ছেদে।###
লেখক: সাজ্জাদ হোসেন শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।    

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.