দেখে এলাম স্বপ্নের সেই কফি হাউজ:

লোকমান হোসেন পলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই.. আজ আর নেই…কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই.. ।
এই গানটি শুনেননি অথবা গুনগুন করে গায়নি এমন বাঙ্গালী কেহ আছেন তার বলা যাবেনা। ভারতীয় কিংবদন্তি গায়ক মান্না দে’র গান, গানটির গীতিকার হলেন আমাদের বাংলাদেশের (পাবনা) গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, তিনি তখন ক্যান্সারে আক্রান্ত, খন্ড খন্ড করে লেখা সেই বিখ্যাত গানটি, এছাড়াও ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মজিবনগর সরকালের মন্তিপরিষদের শপথ অনুস্ঠানে বাজানো হয় তার বিখ্যাত গান ” শোন একটি মজিবরের কন্ঠে লক্ষ মজিবরের ধবনি,,,,”।
কফি হাউজের আড্ডা গানটির সুর করেন সুপর্ন কান্তি ঘোষ, বন্ধু নিখিলেশ সন্যাল, সুজাতা, মইদুল, গোয়ানিস ডি সুজা, অমল, রমা রায়কে নিয়ে গাওয়া সেই গানের কিংবদন্তিরা আজ আর নেই।
মান্নাদে’ও চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে, ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবরে; কিন্তু এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে আছে তার বিখ্যাত সেই কফি হাউজ।কলকাতা আসার আগে অনেকেই বলেছিলেন, ‘যদি সুযোগ হয় একবার ঘুরে এসো মান্না দে’র কফি হাউজে। নিকটতম বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের ছাড়াও লেখক, সাহিত্যিক, গায়ক, রাজনীতিবিদ, পেশাদার, ব্যবসায়ী ও বিদেশি পর্যটকরাও আড্ডা জমান সেখানে।
গেলে অন্যরকম অনুভূতি পাবেন। সেই কফি হাউজে। শুনে তো আমার নিজের ভেতরই কেমন যেন একটা চনমনে অনুভূতি খেলে গেলো। স্বপ্নের গায়কের ঐতিহাসিক কফি হাউজ! সেই কফি হাউজে আমরাও একটা আড্ডা জমাবো, ভাবতেই কেমন যেন অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি হতে থাকলো। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট চত্বর থেকে একটু সামনেই স্বপনে সেই কফি হাউজ,।
দোতলায় উঠতে প্রথমেই চোখে পড়লো সামনে টানানো ‘কফি হাউজ’ সাইনবোর্ডটা। আর আট-দশটা বাঙালি ধাঁচের হোটেল রেস্টুরেন্টের মতোই কলকাতা কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজটি। প্রায় দুপুরের দিকে প্রবেশ করলাম। ঢুকেই যেন প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো। পুরাতন এক হল রুম। পঞ্চাশ-ষাটটার মতো টেবিল সারি সারি সাজানো।
দেয়ালে সারি সারি সাজানো ভারতবর্ষের বিখ্যাত সব শিল্পীর চিত্রকর্ম।দুপুরের দিকে ঢোকায় ভেবেছিলাম হয়তো খালিই পাবো এটাকে; কিন্তু এই ভর দুপুরেও অনেক ভিড় দেখেই বুঝলাম, এর নাম কেন এতো বেশি শুনেছি। কোণার দিকে একটি টেবিল ছাড়া বাকি সবই পূর্ণ। বিশেষ করে চোখে পড়লো সকল বয়সিদের আনাগোনা।
আমাদের দেশে এ ধরনের দোকানে সাধারণত কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ই থাকে বেশি। সেখানে নবীন-প্রবীণদের মিশ্রণে জমজমাট আড্ডা দেখে বেশ ভালোই লাগলো।
আবারও মনে পড়লো, ‘কতজন এলোগেলো, কতজনই আসবে, কফি হাউজটা আজও থেকে যায়।’ আমরাও তো সেই । একটু পরই সাদা পোশাকের শেরওয়ানি ও মাথায় পাগড়ি পরা ষাটোর্ধ একজন বেয়ারা আসলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববারে খোলা থাকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
এছাড়া বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। চার পেয়ালা কফির অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসলো। পেয়ালায় চুমুক দিতেই হারিয়ে গেলাম ধূমায়িত কফির আড্ডায়। নিজেকে মনে হলো মান্না দে। সামনে কবি বন্ধু শিশির দাশগুপ্ত সহ বসা সবাইকে মনে হচ্ছিলো যেন মান্না দে’র আড্ডার সঙ্গী নিখিলেশ সন্যাল, সুজাতা, মইদুল, গোয়ানিস ডি সুজা, অমল, রমা রায়।মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বসু, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, বাঙালি অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো কত বিখ্যাত ব্যক্তিরা আড্ডা দিয়েছেন এই কফি হাউজে! সেই বিখ্যাতদের কাতারে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে ভেবে কিঞ্চিত পুলকিতও বোধ করলাম।
আমিও আজ সেই কফি হাউজে! চোখের সামনেই যেন এক এক করে ভেসে উঠছিল বিখ্যাত মুখগুলো। হাউজটির চারদিকে সাজানো রয়েছে সেই বিখ্যাত মানুষগুলোর চিত্র।
চারদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার সামনেই যেন তারা বসে আছেন।বাঙালির প্রাণের এ আড্ডাস্থলটির নাম এক সময় কফি হাউজ ছিল না। অ্যালবার্ট হল ছিল এর পূর্বনাম।
১৮৭৮ সালের এপ্রিলে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী অ্যালবার্টের নামকরণে এটির নাম করণ করা হয়। এরপর কেটে গেছে প্রায় ১৪০ বছর।
উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী নানা আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক ইতিহাস এই কফি হাউজ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.