গাইবান্ধায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির দুর্নীতি তদন্ত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকায় একে একে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতিসহ বেরিয়ে আসছে নানা প্রতারণার তথ্য-প্রমাণ।
এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ভূয়া তথ্য ও কাগজপত্র সৃজন করে প্রকল্পের অর্থ লুটপাটে স্থানীয় একটি চক্রের জড়িত থাকার তথ্যও মিলেছে।
ইতোমধ্যে জড়িত চক্রের বেশ কয়েকজনের নাম-পরিচয়সহ তাদের প্রতারণার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে এসব তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন।
যুগ্ন সচিব বদরে মুনির ফেরদৌসের নেতৃত্বে তদন্ত কমটির সদস্য গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদেকুর রহমান ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান গত ২৫ জানুয়ারী সাদুল্লাপুর উপজেলায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
তদন্তের প্রথম দিনে কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সুবিধাভোগীদের তালিকা ও বিভিন্ন নথিপত্র অনুসন্ধান ছাড়াও অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়েও প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকসহ ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
তদন্তের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে কমিটির সদস্যরা সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট, নিজপাড়া ও বড় ছত্রগাছা গ্রামে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এসময় তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীর তথ্য যাচাই, নাম থাকা সত্বেও টাকা না পাওয়া, কার্ড হাতিয়ে নেয়া ও প্রতারণাসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
একই সঙ্গে প্রতারণার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা-দুর্নীতিসহ তাদের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় চক্রের কয়েকজনের নাম-পরিচয়সহ বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য-প্রমাণও তুলে ধরেন।
ধাপেরহাট তদন্ত শেষে কমিটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন নথিপত্র, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেন।
এছাড়া গোবিন্দগঞ্জে ১৫৫ জনের নতুন নাম সংযোজন করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের সাড়ে ১১ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে আত্মসাত চেষ্টার ঘটনার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহণ করেন তদন্ত কমিটি। এছাড়া তদন্তের তৃতীয় দিন অাজ বুধবার ২৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেও সুবিধাভোগীর অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহসহ ভুক্তভোগী ও প্রত্যদক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেন তদন্ত কমিটি।
তদন্তের কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় অনুসন্ধানে ওঠে আসা তথ্য-প্রমাণ ও জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস। তবে তিনি জানান, গুরুত্ব সহকারে সমস্ত উত্থাপিত অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
দুর্নীতি ও জালিয়াতি চিহ্নিতসহ তদন্ত কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জড়িতের বিষয়টি উল্লেখ করেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশের কথাও জানান তিনি।
এরআগে, গত ১৬ জানুয়ারী যমুনা টেলিভিশনে ‘ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’তে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ‘ন্যাশনাল সার্ভিসে উইপোকা’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করা হয়।
এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। এরপরেই গত ১৮ জানুয়ারী সরেজমিন অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.