খুলনার পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন গড়াচ্ছে সারাদেশে

খুলনা ব্যুরো:  খুলনা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন গড়াচ্ছে সারাদেশে। বুধবারের সিবিএ-নন সিবিএ ও পাটকল শ্রমিক লীগের বৈঠক থেকে ঘোষিত হয়েছে কর্মসূচী।
ওই কর্মসূচীর আলোকে আগামী ১৩ মে সোমবার থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মিলে ধর্মঘট ছাড়াও প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রাজপথে আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় ও রাজপথেই ইফতারী করা হবে এমন কর্মসূচীও রয়েছে।
তাছাড়া রোববার থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের সাধারণ শ্রমিকরা নিজেদের উদ্যোগে যে ধর্মঘট শুরু করেছে সেটিও অব্যাহত থাকবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সেই সাথে দেশব্যাপী কর্মসূচির আগ পর্যন্ত খুলনা-যশোরের প্রতিদিনের কর্মসূচিও চলমান থাকবে।
অর্থাৎ মিলের উৎপাদন বন্ধ ও তিন ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচী এখন শুধুমাত্র খুলনা-যশোর অঞ্চলে বিদ্যমান থাকলেও আগামী গত সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সারাদেশের ২৬টি পাটকল এলাকায়। বকেয়া পাওনাসহ নয় দফা দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা কর্মবিরতির পাশাপাশি বুধবারও তিন ঘন্টা রাজপথ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালন করে।
গতকাল বুধবার ভোর থেকেই প্রতিদিনের ন্যায়(গত রোববার বিকেল থেকে শুরু হওয়া) মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে বিকেল চারটায় নতুন রাস্তা মোড়, আটরা শিল্প এলাকা ও নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে ইফতারি নামায আদায় করেছে।
বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে দেশের ২৬ টি পাটকলের সিবিএ, নন-সিবিএ নেতারা বুধবার ঢাকায় বিজেএমসি’র সিবিএ কার্যালয়ে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে খুলনা-যশোর অঞ্চলসহ ঢাকা, চট্রগামের ২৬টি পাটকলে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
ফলে আগামী ১৩ মে থেকে দেশের সবকটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অনির্দিষ্টকালের জন্য উৎপাদন বন্ধ করে আন্দোলনে নামার প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে বলে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগের আহবায়ক সরদার মোতাহার উদ্দিন জানান।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, মজুরী কমিশন কার্যকর ও প্রতি সপ্তাহের মজুরী প্রতি সপ্তাহে প্রদানসহ নয় দফা দাবিতে খুলনায় রোববার বিকেল থেকে শুরু হওয়া সাধারণ শ্রমিকদের কর্মবিরতির পর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের সিবিএ-ননসিবিএ ও পাটকল শ্রমিকলীগও এতে সাড়া দেয়।
যার অংশ হিসেবে বুধবার ঢাকায় বৈঠক করে সোমবার থেকে সারাদেশব্যাপী এ কর্মসূচী ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণাসহ খুলনায় সাধারণ শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কর্মবিরতির ৪র্থ দিনের মত গতকালও খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, আটরার আলীম ও ইষ্টার্ণ এবং যশোরের নওয়াপাড়ার রাজঘাটের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রাখে।
দুপুর সাড়ে তিনটায় শ্রমিকরা থালা হাতে নিয়ে স্ব-স্ব মিল গেটে সমবেত হয়। এরপর মিছিল নিয়ে বিকেল চারটায় নতুন রাস্তা মোড়, আটরা ও রাজঘাটের খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবস্থান করে। পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক ও রেল লাইনের উপর বিক্ষোভ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ও রেললাইনের উপর অবস্থান করায় সকল যানবাহন ও ট্রেন চলাচল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
ফলে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দূর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। অবরোধ চলাকালে সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, পাটকল শ্রমিকলীগের খুলনা অঞ্চলের আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, হেমায়েত উদ্দীন আজাদী, খলিলুর রহমানসহ সিবিএ-নন সিবিএ নেতারা।
বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের নয় দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সমাধান নয়: অপরদিকে বুধবার ঢাকায় শ্রম মন্ত্রণালয়ে বসে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফেরা পর্যন্ত পাটকল বিষয়ক উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব নয়।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেহেতু অর্থ ছাড় দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন সেহেতু শ্রমিকদের একটু ধৈর্য্য ধরা উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রীতো আগামীকাল শুক্রবারই(১০ মে) দেশে ফিরছেন। এটুকু সময় অপেক্ষা না করে কেন শ্রমিকরা রাজপথে নামল সেটিই তার বুঝে আসছে না।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমান পাট মন্ত্রীর অনেকটা উদাসীনতার কারণেই পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলা হচ্ছে। এজন্য শ্রমিকরা আন্দোলনের সময় পাটকমন্ত্রীর অপসারণ চেয়েও শ্লোগান দিচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন। #

Chat Conversation End

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.