বড়া বিক্রি করে লেখাপড়ার খরচ চলে শিবগঞ্জের দরিদ্র শিশু তারেকের

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া শিশু তারেকের লেখাপড়ার খরচ ও অভাব অনটনের পরিবারের সহযেগিতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের জল-বাজারে বড়া বিক্রি করে। বাবার স্বল্প আয়ে টানাটানির সংসারে কিছুটা সহযোগিতার জন্য ছোট্ট এই শিশু তারেক সকালে মাদ্রাসায় যায়, আবার বিকেলে বাজারে বড়া বিক্রি করে। তা থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালায় এবং বাবার হাতেও কিছু টাকা গুজে দেয়।

শিশু মোঃ তারেক রহমান (১৪) রাধাকান্তপুর ফাযিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর একজন ছাত্র। তার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার ১১নং উজিরপুর ইউনিয়নের চামাপাড়া গ্রামে। বাবা মোঃ লুৎফর রহমান কৃষি কাজ করেন এবং মা মোসাঃ আকলীমা বেগম একজন গৃহিনী। বহু কষ্টে খরচ চলে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার। তারেক ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার দুই বোন মোসাঃ তাসলীমা বেগম (বিবাহিত) ও মোসাঃ সায়েমা খাতুন (১৭), সে রাধাকান্তপুর ফাযিল মাদ্রাসার আলিম ১ম বর্ষের ছাত্রী। তারেকের বড় ভাই মোঃ মিজানুর রহমান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়া বিক্রি করে তারেকের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারকে সাহায্য করা যেন এক দৈনন্দিন রুটিন কাজে পরিনত হয়েছে।

শিশু তারেক বিটিসি নিউজকে জানায়, আমি লেখাপড়া করে বড় হয়ে ভালো চাকুরী করতে চাই, কিন্তু বাবার অল্প আয়ে আমাদের পরিবার কোনোরকমে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতে পাই। অনটনের সংসারে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালানো বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই পরিবারের কষ্ট দূর করতে আমিও সকালবেলা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করি, আর বিকেলে উজিরপুর ইউনিয়নের জল-বাজারে বড়া বিক্রি করি। সে আরো জানায়, প্রতিদিন সে দুপুরে পদ্মার চর থেকে পটলের পাতা তুলে নিয়ে এসে ডালের সাথে বেটে বড়া তৈরি করে বিক্রি করে। তারেক প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ (দুইশত) পিস বড়া বিক্রি করে, যা থেকে তার খরচ বাদে ২’শ থেকে ২৫০ টাকা লাভ থাকে।

স্থানীয় লোকজনের মতে তারেক তার লেখাপড়া ও পরিবারের খরচে সহায়তা করার জন্য প্রতিদিন কষ্ট করে চলেছে। তাদের দাবী কেউ যদি তারেকের পাশে একটু সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে তার কষ্টটা কম হবে এবং সে তার লেখাপড়ার প্রতি বেশী মনোযোগী হতে পারবে।

রাধাকান্তপুর ফাযিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (আই.সি.টি) মোঃ মেহেদী বিটিসি নিউজকে জানান, তারেক খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং খুব পরিশ্রমী ছেলে। অল্প বয়সেই সে তার পরিবারের জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক কষ্ট করে। তার লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা যথেষ্ট সাহায্য করে তারেককে। এমনকি তার বোন সায়েমা খাতুনকে বিনা বেতনে প্রাইভেটও পড়ান। তারেকের বিষয়টা নিয়ে তিনি সমাজের সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, তারেকের মত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী যদি একটু সহযোগিতা পায়, তবে পরিবার এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.