কেসিসি নির্বাচন ২০১৮ ৩৩ দফার আচরণবিধিতে থাকছে নানা কঠোরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার আর মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি নির্বাচনী প্রচারনা। কাউন্সিলর পদে দলীয় ব্যানারে না হলেও প্রধান দু’টি দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। মেয়র পদে পাঁচ দলের পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে কৌশলে নির্বাচনি প্রচারনা চালাচ্ছেন। যদিও আচরণবিধিমালার ৫ ধারায় কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনি প্রচার শুরু করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তবে কৌশলী হয়ে ভিন্ন নামে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই প্রতিনিধি সভা বা সাংগঠনিক সভার নামে চালানো হচ্ছে নির্বাচনি প্রচারনা। কেউ কেউ প্রার্থী বা দলীয় প্রতীক সম্বলিত ব্যানার দিয়েও করছেন বিভিন্ন কর্মকান্ড। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কে কোন দলের প্রার্থী সেটি বিচার্য বিষয় নয়, সম্পর্ক হবে নির্বাচন কমিশন আর প্রার্থী এমনই। সুতরাং আপাতত: কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও প্রচারণা শুরুর সাথে সাথেই কঠোর হবে কমিশন। বিষয়টি গত ১৫ ও ১৬ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয় রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীরও আশা নির্বাচন হোক নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথেই অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল দুপুরের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শুরু করা যাবে। তবে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। মেয়র পদে প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে এবং কাউন্সিলর পদে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে একটি করে মাইক ব্যবহার করা যাবে। জনসভা নয়, শুধুমাত্র পথসভা করা যাবে তাও জন ও যান চলাচলে বিঘণ করে নয়। পথসভায় কেউ মাইক ব্যবহার করলে অন্য মাইক দিয়ে প্রচারনা চালানো যাবে না। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য একটিমাত্র মাইক বরাদ্দ থাকবে প্রচারনার জন্য। তবে মাইকিংয়ের জন্য রিটার্নিং অফিসারের মূল অনুমতিপত্র সাথে রাখতে হবে বলেও জানান খুলনার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি বলেন, এক মাইক বলতে একটিমাত্র চোঙা বোঝাবে। কেউ একই মাইকে দু’টি চোঙা ব্যবহার করলে সেটিও নির্বাচনী আচরণবিধির আওতায় আসবে।
মাইকিংয়ের ন্যায় নির্বাচনী কার্যালয়ও মেয়রের ক্ষেত্রে এক থানা এলাকায় একটি এবং কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্ষেত্রে একটি ওয়ার্ডে একটি হবে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই প্রত্যেক প্রার্থীকে নির্বাচনী কার্যালয়ের ঠিকানা এবং সেখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাচনী প্রধান এজেন্টের মোবাইল নম্বরসহ রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছতে হবে। প্রধান এজেন্ট যিনি হবেন তারও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। ওই তালিকা সরবরাহ করা হবে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে। যাতে সহজেই নির্বাচনী কার্যালয় চিহ্নিত করা যায় এবং অতিরিক্ত কার্যালয় পেলেই যেন ব্যবস্থা নেয়া যায়।
পোষ্টারের ক্ষেত্রেও এবার রয়েছে কঠোর আচরণবিধি। পোষ্টার হোক আর ব্যানার হোক সবই হতে হবে সাদাকালো এবং সর্বোচ্চ ১৮ ইঞ্চি বাই ২৩ ইঞ্চি সাইজের। পোষ্টার বা ব্যানারে প্রার্থী ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারো ছবি বা প্রতীক ছাপানো যাবেনা। তবে প্রার্থী কোন রাজনৈতিক দলের হলে শুধুমাত্র ওই দলের বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি দেয়া যেতে পারে।
আচরণবিধির ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থী বা প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন পর্যন্ত কোন প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কোন দল প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন চাঁদা বা অনুদান দিতে বা অঙ্গীকার করতে পারবেন না।
কোন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার কাজে সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো বা রেস্ট হাউজে অবস্থান করতে যেমন পারবেন না, তেমনি তার পক্ষে বা অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিপক্ষে প্রচারনার স্থান হিসেবে সরকারি সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো, রেস্ট হাউজ, কোন সরকারি কার্যালয় অথবা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষককে ব্যবহার করতে পারবেন না।
পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া কোন জনসভা বা শোভাযাত্রা যেমন করা যাবে না তেমনি পথসভা ও ঘরোয়া সভার জন্যও কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। পথসভর জন্য কোন মঞ্চও করা যাবে না।
ভোটের দিন ভোটারদেরকে প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটার  সিøপ দেয়া যাবে তবে প্রার্থীর ছবি বা তার প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। ওই সিøপও হবে তিন ইঞ্চি বাই সাড়ে চার ইঞ্চি সাইজের মধ্যে। নির্বাচনি প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে কোন জীবন্ত প্রাণি ব্যবহার করা যাবে না।
আচরণবিধিতে যানবাহন সংক্রান্ত বিধি-নিষেধে উল্লেখ রয়েছে, কোন ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌযান বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বের করা যাবে না। করা যাবে না কোন প্রকার শোডাউনও।
দেয়াল লিখন যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তেমনি গেইট, তোরণ বা ঘের নির্মাণ, প্যান্ডেল বা ক্যাম্প স্থাপন ও আলোকসজ্জাকরণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পোষ্টার দেয়ালে সাটানো যাবে না, তবে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যাবে। এমনকি নির্বাচনী কার্যালয়েও কোন প্রকার আটাযুক্ত জিনিস দিয়ে পোষ্টার দেয়ালে সাটানো যাবেনা।
আচরণবিধির ২২ নম্বর ধারামতে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তবে যদি এমন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হন সে ক্ষেত্রে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীবিহীন শুধুমাত্র ভোট দিতে যেতে পারবেন।
এভাবে ৩৩টি ধারা সম্বলিত আচরণ বিধিমালার আলোকেই আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেসিসি নির্বাচন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে কোন দল বা ব্যক্তি দেখা হবে না উল্লেখ করে রিটার্নিং অফিসার মো: ইউনুচ আলী বলেন, শতভাগ গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেয়াই নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য। এজন্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অবশ্য কেসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে আশংকা অনেক প্রার্থীরও। বিশেষ করে কোন কোন ওয়ার্ডে সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত অনেক প্রার্থী এমন আশংকা করে বলেন, ভোটদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হলেই নির্বাচন হবে গ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে কেসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও ২০১৩ সালের নির্বাচনে ভোটের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মো: জিয়াউল ইসলাম মন্টু বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি যদি পরাজয়ও বরণ করেন সেক্ষেত্রে কোন দু:খ থাকবে না। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে কেউ যদি ফলাফল ছিনিয়ে নিতে চায় সেটিও কঠোর হাতে দমন করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন। ১নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শাহজী কামাল টিপু বলেন, এখনও তিনি আশংকায় আছেন যে, ভোটাররা ভোটদানের সুযোগ পাবে কি না। তবে নির্বাচন কমিশনের এ পর্যন্ত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধারা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ হতে পারে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.