কাল থেকে আবু নাসের হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি শুরু

খুলনা ব্যুরো: সরিয়ে ফেলা হয়েছে আইসিইউতে থাকা রোগী। আগে থেকেই খালি ছিল প্লাষ্টিক সার্জারী এন্ড বার্ণ ইউনিট এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ। জরুরি বিভাগের কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে। বেডগুলো সাজানো হচ্ছে করোনার রোগীদের জন্য। তৈরি হয়েছে নতুন রোষ্টার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠিয়ে চাওয়া হয়েছে আরও কিছু জনবল। এভাবেই চলছে খুলনার  সরকারি প্রতিষ্ঠান শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রস্তুতি।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল শনিবার (০৩ জুলাই)  থেকে এ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এসএম মোর্শেদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ২৯ জুনের এক পত্রের আলোকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের আলোকে বুধবার সকালে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সকল বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠকে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস,এম, মোর্শেদ সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতালের উত্তর পাশের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন প্লাষ্টিক এন্ড বার্ণ ইউনিটের ২০টি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিনি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে ১৫টি বেড স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই ৩৫টি বেড ছাড়াও চতুর্থ তলার আইসিইউ বিভাগের ১০টি বেডও করোনার রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
তবে সেখানে গতকাল দু’জন রোগী থাকায় একজনের অবস্থা ভালো থাকায় তাকে নিউরোলজী বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। অপর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় তাকে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে যদি তিনি অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে তার আত্মীয়-স্বজন চাইলে করোনা রোগীদের পাশাপাশি তাকেও সেখানে রাখা যেতে পারে বলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানিয়েছেন।
ওই রোগী সম্পর্কে অপর একটি সূত্র জানায়, আবু নাসের হাসপাতালে নেয়ার আগে তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন চিকিৎসকের চাচা এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক পক্ষীয় একজনের বন্ধু। কিন্তু খরচ বাঁচাতে তাকে সিটি মেডিকেল থেকে সম্প্রতি আবু নাসেরের আইসিইউতে নেয়া হয়। অথচ সেখানেও এখন করোনা রোগী ভর্তি করার ফলে অন্য রোগীদের রাখা যাচ্ছে না।
আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রস্তুতি সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস, এম, মোর্শেদ গতকাল জানান, আগামীকাল শনিবার থেকেই করোনা পজেটিভ রোগীদেরই শুধু এখানে ভর্তি করা হবে। যেহেতু আগে থেকেই প্রতিটি বেডের সাথে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন টানা ছিল সেহেতু এখন সেখানে শুধুমাত্র বেডগুলো বসিয়েই রোগী রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইসিইউ’র ১০টিসহ মোট ৪৫টি বেডে রোগী ভর্তি করা হবে।
আপাতত যে জনবল আছে তা দিয়েই যাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আরও কিছু জনবল চেয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ২০জন ডাক্তার, ৫০জন নার্স এবং ৫০জন আউটসোর্সিং কর্মচারী চাওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ জনবল না দেয়া হলে করোনা ইউনিট চালিয়ে রাখা অসম্ভব হতে পারে বলেও তিনি আশংকা করেন।
হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজিসহ অন্যান্য বিভাগে ১৩০জনের মতো রোগী ভর্তি আছেন। তবে এর মধ্যে কারও আইসিইউর প্রয়োজন হলে তাকে ওই হাসপাতালে স্থান দেয়া সম্ভব হবে না।
এ ক্ষেত্রে খুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আর কোন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মূমূর্ষ রোগীদের জন্য একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোষ্ট অপারেটিভের মধ্যে থাকা চারটি আইসিইউ বেড ছাড়া খুলনায় আর কোন সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা থাকলো না। অর্থাৎ এখন থেকে আবারো বেসরকারি হাসপাতালের গলাকাটা মূল্যে মূমূর্ষ রোগীদের রাখতে বাধ্য হতে হবে। কিন্তু যাদের সে সঙ্গতি নেই তাদের জন্য সেবার দুয়ার অনেকটা বন্ধের পথে।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বিটিসি নিউজকে বলেন, আগামীকাল শনিবার থেকে যাতে করোনা রোগী ভর্তি করা যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের হাসপাতালে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেটুকু কাজ বাকী রয়েছে তা আজকের মধ্যে শেষ হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
করোনা ইউনিটে শুধুমাত্র পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের ভর্তি করা হবে। এজন্য ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। নিচ তলা থেকে রোগীদের চতুর্থ তলার আইসিইউতে নেয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে পৃথক লিফট।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন(বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ) খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বিটিসি নিউজকে বলেন, গতকাল তিনি শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। করোনা ইউনিটের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নেন। সর্বশেষ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অন্যান্যদের সাথে বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, খুলনায় করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য গত বছর এপ্রিল মাস থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় নগরীর নূর নগরস্থ ডায়াবেটিক হাসপাতালকে করোনা ইউনিট ঘোষণা দিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের যাত্রা হয়। চলে ওই বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এরপর রোগীর সংখ্যা কমে আসায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছেড়ে দিয়ে খুমেক হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্থাপিত আইসিইউ ভবনকে করোনা ইউনিট ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। একশ’ বেডের ঘোষণা দেয়া হলেও শুরুতে একশ’ বেড প্রস্তুত ছিল না। রেড জোন ও ইয়োলো জোন অর্থাৎ দু’টি জোনের একদিকে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী অপরদিকে করোনা সন্দেহের রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে গত ৩০ মে থেকে এটিতে একশ’ বেডে রোগী ভর্তি শুরু হয়। সেই সাথে আইসিইউ বেড ও এইচডিইউ বিভাগ সংযোজন করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন থেকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের সব রোগী ছেড়ে দিয়ে সেখানে ৭০ বেডের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের যাত্রা হয়। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গত বছর থেকেই গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে একশ’ বেড ছিল।
গতকাল থেকে সেখানেও আরও ২০টি সংযোজন করে মোট ১২০বেড করা হয়। আর আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে আবু নাসেরে আরও ৪৫টি বেড। অর্থাৎ খুলনায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৬৫ বেডের করোনা হাসপাতালে কার্যক্রম চলছে। কিন্তু খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। গ
তকালও সেখানে করোনা আক্রান্ত ও করোনা সন্দেহের সর্বমোট ১৯৮জন রোগী ছিলেন বলে সেখানকার মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানিয়েছেন। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ৭০ বেডে গতকাল ৭০জনই রোগী ছিলেন বলে সেখানকার মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানান। আর গাজী মেডিকেলে গতকালকের রোগী সংখ্যা ছিল ৯৩জন। এটি জানান ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুরর রহমান। অর্থাৎ তিন হাসপাতালে ৩২০টি বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৩৬১জন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.