কানসাটে ৫২-৫৫ কেজিতে আমের মণ!, আড়ৎদারদের সহযোগিতায় কানসাটে আম ডাকাতি, অসহায় চাষীরা, নিরব সংশ্লিষ্টরা

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আমের মন ৫২ থেকে ৫৫ কেজি বা তারও বেশী কেজিতে। এমনিতেই সাধারণ সময়ে ৪০ কেজির স্থলে কাচামাল হওয়ায় ৪৫ কেজি নিতো ব্যাপারিরা আড়ৎদারদের মাধ্যমে। এই বেশী নেয়ার প্রবনতা বেড়েই চলেছে দিনদিন। ৪৫ থেকে ৪৮, ৪৮ থেকে ৫০, ৫০ থেকে ৫২, ৫২ থেকে ৫৫ কেজিতে এখন মন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং দেশ ও বিদেশে আমের বড় বাজার নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী কানসাট আমবাজারে।
কোন কোন আড়তে আবার ৬০ কেজি নেয়ার কথা বিভিন্ন আম চাসী মাধ্যমে অভিযোগ এবং শোনা গেছে। ৪০ কেজিতে আমের মন হলেও চাষীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক এবং বাধ্য করে বর্তমানে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কেজি আম বেশী নেয়া হচ্ছে, কিন্তু কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। যেন ‘মঘের মুল্লুক’। এই বেশী আমের সব সুবিধা ভোগ করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারিরা। আর এসব ব্যাপারিদের সহযোগিতার নামে নিজের এলাকার চাষী বা ব্যবসায়ীদের আম দিয়ে দিচ্ছেন আড়ৎদাররা।
জেলার আম বাজার নিয়ন্ত্রণ বা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট অনেক দপ্তর রয়েছে। কিন্তু কোন দপ্তরই বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছেন না। চাষীরা অনেক কষ্ট করে আম উৎপাদন করে বাজারজাত করেন। কস্টের ফসল যখন আড়ৎদারদের কাছে জিম্মি হয়ে প্রায় দেগুন দিয়ে আমের মন পুরন দিতে হয়, তখন কস্টে বুক ফেটে যায় আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। কিন্তু একটুও বিবেকে বাঁধছেনা এসব ব্যাপারি, আড়ৎদার বা সংশ্লিষ্টদের। কোন যুক্তিতে বা কোন লাভের আশায় এসব করছেন আড়ৎদাররা। শুধু আম বেশী নিয়েই ক্ষ্যান্ত নন এসব ব্যাপারি বা আড়ৎদাররা। রয়েছে আম বেছে বাছট ফেলে এবং টাকা পরিষোধের ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের। শুধু কানসাট বাজারেই নয়, জেলার রহনপুর, ভোলাহাট আম বাজারসহ বিভিন্ন আম বাজারেও ৫০ কেজির উপরে আমের মন নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন কৃষি ও আম ব্যবসায়ী সংগঠন রয়েছে। এদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অসহায়-জিম্মি হয়ে চাষীদের এমন ক্ষতির সময়ই যদি এসব সংগঠন কোন প্রতিকার করতে বা এগিয়ে না আসে এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা না হয়, তাহলে এসব কৃষক-চাষীরা কোথায় গিয়ে তাদের প্রতিকার পাবে? এছাড়া এসব জেনেও নিরব প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা, কেন? এমন প্রশ্ন জেলার বিবেকবান ও সচেতন মহলের।
সারাজীবন ৪০ কেজিতে একমণ শুনে আসলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আম বাজারে ৫০-৫২ কেজিতে এক মণ ধরে আম ক্রয় করছেন আড়তদাররা। এতে বিপাকে পড়েছেন আমচাষি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এ সমস্যা দ্রতই সমাধান করা হবে। আম চাষিদের জিম্মি করেই ৫০-৫২ কেজিতে একমণ ধরে আম ক্রয় করছেন আড়তদাররা। এমনকি ওজনের আম বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ভোগাস্তি পোহাতে হচ্ছে চাষিদের।
আম বিক্রি করতে আসা শ্যামপুর এলাকার আরিফ আলী বলেন, এ বছর অন্য বছরের থেকে গাছে আম অনেক কম ধরেছে। আর এদিকে আম বিক্রি করতে এসে শুনছি ৫২ কেজিতে এক মণ ধরা হবে। এতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এর আগেও বলা যায়, গত বছরও আমাদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নিয়েছেন আড়তদাররা। আর এবার ফের ৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে আমরা কিভাবে কীটনাশক খরচ পরিশোধ করব।
কানসাট পুখুরিয়া এলাকার বিপ্লব বিশ্বাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আম হচ্ছে কাচা পণ্য। গত ৫ বছর থেকে আমরা ৪৫ কেজিতে এক মণ ধরেই আম বিক্রি করতাম। তবে গত বছর হঠাৎ আড়তদাররা ৫০ কেজিতে মণ নেয়া শুরু করে। এবার ফের বলছে ৫২ কেজিতে মণ বিক্রি করতে হবে। এতে আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। তিনি বলেন, আম বাজারে এক কথা বলে আম কিনেন আড়ৎদাররা আর ঘরে গিয়ে ওজনের সময় খারাপ আচরণ করে। আমরা কিছু বলতে পারিনা।
কানসাটে আম বিক্রি করতে আসা জিয়াউর নামে এক কলেজ শিক্ষক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত ১০ দিন থেকে এ কানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে আসছি। এদিনগুলোতে এমন কোন দিন নেই যে আড়তদারদের সঙ্গে ঝামেলা হয়না। কেউ বলে ৫০ কেজিতে মণ নিবে, ফের কেউ বলে ৫২ কেজিতে মণ নিব। তবে এবার আমের দাম ভালো আছে। এই প্রতিনিধির কাছে এমন অভিযোগ করেছেন শতাধিকের বেশি আম চাষি। কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, কানসাট বাজারে ওজন নিয়ে একটি ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। এটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান করা হবে।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কানসাট বাজারে আম চাষিদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নিচ্ছে আড়তদাররা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন হাজারো চাষি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর জেলার সব আম বাজারে এটি ওজনে মণ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কানসাট আম বাজারে ওজন নিয়ে একটি ঝামেলার বিষয়টি শুনেছি। পরে জেলার অন্য আম বাজারের সঙ্গে ওজন মিলিয়ে এ বাজার চালানো নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আমের মণ ৫২ কেজিতে নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসব অসহায় চাষী ও ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আড়ৎদার সমিতি, আম ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এমনটায় আশা ভূক্তভোগীদের। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.