কর আহরণই আমাদের মুখ্য বিষয় নয় : এনবিআর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যত বেশী রেভিনিউ আসবে তত রেট কমানো যাবে উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও হয়রানি বন্ধে অটোমেশনে নিয়ে আসছি। দেশের উন্নয়নে কাজ করছি।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ফিনিশড প্রডাক্টে কর বসানো হয় দেশী শিল্পকে সুরক্ষা দিতে। কর নির্ধারণে আন্তর্জাতিক কিছু চুক্তির কারণে বাধ্যবাধকতা আছে৷ সোডিয়াম সালফেট আমদানি সীমিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে। লবণ চাষিদের রক্ষায় সেভাবে ইমপোর্ট পারমিট দিতে হবে। পোড়া মবিল গাড়ির যন্ত্র, পরিবেশ নষ্ট করে। ব্যবহৃত লুবের ডাম্পিং জোন কেন বাংলাদেশ হবে?
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে করদাতাদের বুঝতে অসুবিধা হয়। শুধু কর আহরণই আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। স্থানীয় শিল্পের বিকাশ, পরিবেশ সুরক্ষা, কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা অনেক বিষয় বিবেচনা করা হয়। আমরা কি ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল থাকব? স্বনির্ভরতা অর্জন করব না? যদি অন্যের ওপর নির্ভর করি তাহলে ফুড সেফটি থাকবে?
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পর্যটন শিল্প এমন প্রচুর ভ্যালু অ্যাড হয়। টুরিস্টরা বেহিসেবি খরচ করে। আমরা প্রত্যাশা করি প্রচুর রাজস্ব আসবে। তবে এর জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হয়। কক্সবাজারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল এ খাতে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এনেছে সরকার। ব্যবসা, অফিস, দৈনন্দিন কাজ আর বন্ধ করতে হবে না। হিসাব স্বচ্ছ হলে রাজস্ব, কর নিয়ে ভয় নেই। অডিট রিপোর্টের জন্য আমরা অ্যাপস ডেভেলপ করেছি। অডিটের ডাটা ইনপুট দিলে কোড নাম্বার আসবে। নাম্বার ছাড়া অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করব না। কমপ্লায়েন্সের মধ্যে আসতে হবে।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বন্দরের সদস্য (অর্থ) মো. কামরুল আমিন বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করছি। ৯ হাজার টিইইউস পণ্য নিলামের অপেক্ষায় আছে। এগুলো দ্রুত নিলাম করলে বন্দরে জট কমবে। রফতানি কনটেইনারের জন্য ৪টি স্ক্যানার বসানোর কথা। আইএসপিএস কোড কমপ্লায়েন্সের জন্য এটি দরকার।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, কাস্টম হাউসে জনবলের অভাব রয়েছে। পরীক্ষাগারে কেমিস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, সারা বছর না করে নির্দিষ্ট সময়ে অডিট করা দরকার।
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ খোকা বলেন, লবণের দাম কম হওয়ায় কৃষক মাঠমুখী হচ্ছে না। শিল্পের নামে লবণ আমদানি করে বাজার সয়লাব করছে। হাইজিন ড্রাই ফিশ তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে।
রিহ্যাব চট্টগ্রাম সভাপতি আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চাই স্বল্প সুদে সাধারণ মানুষের বাসস্থানের জন্য। কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা দরকার, নয়তো লন্ডন, মালয়েশিয়ার মতো সেকেন্ড হোমে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে ভয়াবহ জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ লকডাউন প্রত্যাহার করায় কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছে। এনবিআরের দায়িত্ব যারা ভ্যাট ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের ফ্যাসিলেট ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিকরা। নির্মাণ শিল্পের উপকরণের দাম বাড়ছে।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বিশ্বজুড়ে লাভ লোকসানের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা হয়। বেসিক ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। কোনো নোটিশ, সার্কুলার ছাড়াই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর নেয়। আমরা চাই অসম প্রতিযোগিতা দূর হোক। এআইটি ফেরত বা সমন্বয়ে গড়িমসি দূর করতে হবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন বলেন, খাদ্যশস্য আমদানিতে জটিলতা নিরসন করতে হবে। হ্যাসেল ফ্রি বাজেট চাই। কনটেইনার মুক্ত বন্দর, কাস্টমসের দ্রুত শুল্কায়ন চাই।
বক্তব্য দেন চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বান্দরবান চেম্বারের অমল কান্তি দাশ, চিটাগাং উইম্যান চেম্বার, রাঙামাটি চেম্বার, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ফার্নিচার মালিক সমিতির প্রতিনিধি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান স..জিয়াউর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.