ইসরাইল কেন লেবাননে সাদা ফসফরাস বোমা হামলা করছে?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন সীমান্তের উপর দিয়ে সাদা ফসফরাস বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত এই গ্যাস চোখ ও ফুসফুসের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি চামড়া মারাত্মকভাবে পুড়িয়ে দিতে পারে, আর সে কারণে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা এর ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী বলছে গাজা ও লেবাননের ‘সশস্ত্র জঙ্গীদের’ বিরুদ্ধে তাদের এই অস্ত্রের ব্যবহার পুরোপুরি বৈধ। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত হওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্র বলছে ইসরাইল ওই দুই দেশে আসলেই সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে কি না তা তদন্ত করে দেখবে। এখন বেসামরিক মানুষের অবস্থানের খুব কাছে এ ধরনের যুদ্ধ উপকরণ ব্যবহার করে ইসরাইল কি আইন ভঙ্গ করছে? নাকি যুদ্ধের সময় তাদের এটি ব্যবহারের অধিকার আছে?
‘এটি আসে সাদা মেঘের মতো। কিন্তু মাটিতে পড়া মাত্র এটি পাউডার হয়ে যায়।’ আলী আহমেদ আবু সামরা, দক্ষিণ লেবাননের ৪৮ বছর বয়সী এই কৃষক বলেন, গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ তিনি নিজে সাদা ধোঁয়ার মেঘের মধ্যে পড়ে যান। ‘তারা বলে যে এটির গন্ধ রসুনের মতো, কিন্তু এটা আসলে তার চেয়েও খারাপ। গন্ধটা নেয়াই যাচ্ছিল না। সুয়ারেজ লাইনের চেয়েও বাজে।’ আলী একটা সাদা ফসফরাস হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়তে থাকা সাদা ফসফরাস ভয়ংকর বিষাক্ত এবং দ্রুত আগুন ছড়ায়। ‘আমার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে,’ বলছিলেন ধায়রা গ্রামের আলী, ‘যদি আমরা তখন ভেজা কাপড়ে নাক ও মুখ না চেপে ধরতাম তাহলে হয়তো আজ বেঁচেই থাকতাম না।’ বিবিসি স্বাধীনভাবে সত্যতা যাচাই করে দেখতে পেয়েছে যে অক্টোবর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত আইডিএফ অন্তত চারটি শহর ও গ্রামে বেশ কবার সাদা ফসফরাস দিয়ে হামলা চালায়।
গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সহিংসতার ছড়িয়ে পড়ে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তেও, যাতে দুপক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং হাজার হাজার লোক উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও হামাসের মিত্র হিসেবে হেজবুল্লাহ কোন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী না হয়েও পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী, যাদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে।
হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রায় প্রতিদিনের রকেট ও ড্রোন হামলা ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) মোকাবেলা করেছে বিমান হামলা এবং ভারী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। যার মধ্যে সাদা ফসফরাস হামলাও আছে। যখন সাদা ফসফরাস বোমা থেকে বের হয়, তখন এটি অক্সিজেনের সাথে মিশে একটি ভারী ধোঁয়ার আস্তরণ তৈরি করে। এটা মাটিতে লড়তে থাকা সৈন্যদের জন্য একরকম তাৎক্ষণিক আড়াল তৈরি করে, যাতে শত্রুরা তাদের অবস্থান বুঝতে না পারে।
এটা খুবই কার্যকরী এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বৈধ সামরিক কৌশল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা দুপক্ষেরই দায়িত্ব এই অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে তারা এটি ২০০৪ সালে ইরাকে ব্যবহার করেছে, এরপর ২০১৭ সালে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে আবারও সাদা ফসফরাস ব্যবহার করে। ২০০৮-২০০৯ সালে গাজায় হামলার সময়ও ইসরাইল এই কেমিক্যাল ব্যবহার করে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘ধায়রার এই হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত হওয়া উচিত, কারণ এটা ছিল একটা বিশৃঙ্খল হামলা যাতে কমপক্ষে নয় জন বেসামরিক লোক আহত হয়, বেসামরিক স্থাপনার ক্ষতি হয় এবং এ কারণেই এটা বেআইনি।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.