ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মুখে সতর্ক ভারত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের একটি কনস্যুলার ভবনে বিমান হামলায় দুই জেনারেলসহ রেভল্যুশনারি গার্ডের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। এই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানিয়েছে। ইরান ‘শিগগিরই’ ইসরায়েল আক্রমণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এমন অবস্থায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় নাগরিকদেরকে ইরান ও ইসরায়েল সফর না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। কেন্দ্র বলেছে, ‘‘যারা বর্তমানে ইরান বা ইসরায়েলে রয়েছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। নিজেদের চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে সীমিত করতে হবে গতিবিধি।’’
ফ্রান্স এবং রাশিয়া তাদের নাগরিকদের উদ্দেশেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে।
ইসরায়েলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সেখানে প্রায় ৯০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ইসরায়েলে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এপ্রিল, মে মাসে ভারতীয় আরো শ্রমিক, কর্মচারীদের যাওয়ার কথা ছিল।
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়ায় গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু সরকার দিল্লির কাছে আবেদন জানায়। দুই দেশের সরকারি বোঝাপড়ায় ভারত থেকে এপ্রিল ও মে মাসে ছয় হাজার শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা পিটিআই। এর অংশ হিসেবে গত ২ এপ্রিল হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ৬৪ জন নির্মাণ শ্রমিক প্রথম দফায় ইসরায়েলে গিয়েছেন।
চলতি মাসে মোট দেড় হাজার শ্রমিকের ইসরায়েল যাওয়ার কথা। তারা লোহার কাঠামো, ইমারত নির্মাণ, টাইলস বসানোর কাজ করবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই যাত্রা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
সংখ্যায় কম হলেও ইরানেও ভারতীয় নাগরিকেরা রয়েছেন। বিশেষত, তেহরানে বহু দশক ধরে ভারতীয়রা বসবাস করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যোগ রয়েছে সেখানকার ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়ের।
অসুরক্ষিত আকাশপথ
সামরিক সংঘাতের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে ইরান ও ইসরায়েলের আকাশপথ যাত্রীবাহী বিমানের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এয়ার ইন্ডিয়া ইরানের একাংশের আকাশপথ ব্যবহার করছে না।
শনিবার লন্ডনগামী একটি বিমানকে ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। এর ফলে ইউরোপগামী বিমানের গন্তব্যে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাড়তি সময় লাগবে। যদিও ইরানের দক্ষিণ অংশের আকাশপথ ব্যবহার এখনই বন্ধ করছে না এয়ার ইন্ডিয়া।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার মতোই ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই সর্তকতা বজায় থাকবে।
‘বিশ্ব মিত্র’ ভারত
দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে ইরানের সাথেও রয়েছে সুসম্পর্ক। দুই বন্ধু দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে দিল্লির অবস্থান কী হবে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অনিন্দ্য মিত্র বলেন, ‘‘ইসরায়েল ও ইরান দুটিই ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র। ফলে তাদের মধ্যে সংঘাত বাধলে তা ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। ভারতকে চেষ্টা করে যেতে হবে যাতে দুই পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখা যায়। আর যদি লড়াই বাধেও তার মাত্রা যেন সীমিত থাকে।’’
২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘বিকশিত ২০৪৭’-এর লক্ষ্য সামনে রেখেছে। তাতে ভারত ‘বিশ্ব মিত্র’ হিসেবে নিজেকে স্থাপন করতে চায়।
এশিয়ার চলতি উত্তেজনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী ডিডব্লিউকে বলেন, ‘‘এটা সার্বিক যুদ্ধ হবে না। যদি হয়ও, তা হলে দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে হবে ভারতকে। যুদ্ধের আগে দেশগুলির পারস্পরিক আলোচনার সঙ্গে দিল্লির যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
তার মতে, ‘‘মিত্রতার মাধ্যমে যুদ্ধের বাতাবরণ সরিয়ে ফেলা উচিত। ভারত সেই চেষ্টায় করবে যেহেতু তারা নিজেদের বিশ্ব মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.