২ গোলরক্ষকের ভুল, ১টি লাল কার্ড এবং লেভানদোভস্কির হ্যাটট্রিকে বার্সার জয়

 

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: শুরুতে এগিয়ে গেলেও মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের ভুলে বেশিক্ষণ ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। খানিক বাদে পিছিয়েও পড়ে তারা। তবে বিরতির আগে অনেক বড় ধাক্কা খায় ভালেন্সিয়া, বাজে এক ভুলে বহিষ্কার হয় তাদের গোলরক্ষক। এক জন কম নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে আর লড়াই করতে পারেনি তারা। ঘটনাবহুল ম্যাচটি জিতে লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে ফিরল শাভি এর্নান্দেসের দল।
ঘরের মাঠে সোমবার রাতে বার্সেলোনার জয়ের নায়ক রবের্ত লেভানদোভস্কি। তার দারুণ হ্যাটট্রিকে লা লিগার ম্যাচটি ৪-২ ব্যবধানে জিতেছে কাতালান ক্লাবটি।
ফেরমিন লোপেসের গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর হুগো দুরো সমতা টানেন। ভালেন্সিয়ার দ্বিতীয় গোলটি করেন পেপেলু, তবে দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান গড়ে দেন লেভানদোভস্কি।
আগের আট দিনে বার্সেলোনা শিবিরে অনেক কিছু ঘটেছে। রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে লিগে ফিরতি দেখায় ৩-২ গোলের হারে তাদের শিরোপা জয়ের ক্ষীণ আশাটুকুও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। হাতছাড়া হয় পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানও।
তবে ওই দুই নেতিবাচক খবরের পর যোগ হয়েছে দারুণ এক সুসংবাদ; সিদ্ধান্ত বদলে আগামী মৌসুমে দায়িত্বে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাভি। কোচকে নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পর জয়ের পথেও ফিরল দলটি।
বল দখলে একচেটিয়া আধিপত্য করলেও শুরুতে বার্সেলোনার আক্রমণগুলো ছিল ধারহীন। তবে দারুণ ফিনিশিংয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেয়েই এগিয়ে যায় তারা। ২২তম মিনিটে বাঁ থেকে রাফিনিয়ার ক্রস বক্সে পেয়ে হেডে গোলটি করেন ফেরমিন লোপেস।
তবে, মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের অমার্জনীয় ভুলে তাদের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ পাঁচ মিনিটও থাকেনি।
বারবার প্রতি-আক্রমণে ভীতি ছড়ানো ভালেন্সিয়া ২৭তম মিনিটে আরেকটি পাল্টা আক্রমণ করে। প্রতিহত করতে বক্সের বাইরে বেরিয়ে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন জার্মান গোলরক্ষক; কিন্তু ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি। একটু ওপরে ওঠা বল বুক দিয়ে নামিয়ে আলতো শটে ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন হুগো দুরো।
আট মিনিট পর গোলরক্ষকের লম্বা করে বাড়ানো বল ধরে একা বক্সে ঢুকে পড়েন তরুণ ফরোয়ার্ড গনসালেস। তাকে পেছন থেকে রোনালদ আরাউহো ফাউল করলে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেপেলুর নিখুঁত স্পট কিকে এগিয়ে যায় ভালেন্সিয়া।
বিরতির আগের কয়েক মিনিটে প্রবল চাপ দেয় বার্সেলোনা। দারুণ কয়েকটি সুযোগও পায় তারা; কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি একটিও। ৪৪তম মিনিটে জোয়াও কানসেলোর জোরাল শট গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে ঠেকানোর পর আরাউহোর প্রচেষ্টা পোস্টে লাগে।
এরপরই বড় ভুল করে বসেন জিওর্জি মামারদাশভিলি। সতীর্থের ব্যাকপাস নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে তার প্রথম ছোঁয়াটা একটু জোরে হয়ে যায়, বল বেরিয়ে যায় বক্সের বাইরে, কাছেই থাকা লামিনে ইয়ামাল ছুটে এসে শট নিলে বল গোলরক্ষক জিওর্জির হাতে লাগে। ভিএআর মনিটরে দেখে জর্জিয়ার গোলরক্ষককে লাল কার্ড দেখান রেফারি।
বদলি গোলরক্ষক ইয়াউম নেমেই পরীক্ষায় পড়েন। তবে রাফিনিয়ার ওই ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি, এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ভালেন্সিয়া।
বিরতির পর প্রথম মিনিটেই আক্রমণ শাণায় ভালেন্সিয়া। বক্সে গনসালেসকে কড়া ট্যাকলে ডিফেন্ডার ইনিগো মার্তিনেস ফেলে দিলে পেনাল্টির আবেদন করে সফরকারীরা, তবে রেফারির সাড়া মেলেনি।
তিন মিনিট পরই সমতাসূচক গোল পেয়ে যায় বার্সেলোনা। ইলকাই গিনদোয়ানের ক্রসে দারুণ হেডে গোলটি করেন লেভানদোভস্কি।
পরপর দুই মিনিটে দুই পাশে দারুণ দুটি সুযোগ তৈরি হয়। ৭৩তম মিনিটে আরাউহোর হেড লাফিয়ে গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক, এরপর ওই কর্নার রুখে দিয়ে পাল্টা আক্রমণে ওঠে ভালেন্সিয়া। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়েগো লোপেস, তবে শট নিতে একটু দেরি করেন তিনি, ক্লিয়ার করেন পেদ্রি।
৮২তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। কর্নারের পর আরাউহোর হেডে বল ফাঁকায় পেয়ে যান লেভানদোভস্তি, পাল্টা হেডেই গোলটি করেন তিনি।
আর যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন পোলিশ তারকা। তার জোরাল শটে ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি গোলরক্ষক।
লা লিগায় লেভানদোভস্কি এটা প্রথম হ্যাটট্রিক। এবারের লিগে তার মোট গোল হলো ১৬টি।
গত জানুয়ারির শেষ দিন থেকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিত ছিল বার্সেলোনা। উঠে এসেছিল লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও সম্ভাবনা জাগায় তারা। কিন্তু সবশেষ দুই সপ্তাহে তাদের সব আশা শেষ।
গত ১৬ এপ্রিল পিএসজির বিপক্ষে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার পর লা লিগায় রেয়ালের বিপক্ষে ওই হার। অবশেষে এই জয়ে অন্তত লিগে রানার্সআপ হওয়ার লড়াইয়ে ভালোমতোই থাকল তারা।
৩৩ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। ২ পয়েন্ট কম নিয়ে তৃতীয় স্থানে জিরোনা।
সমান ম্যাচে ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার খুব কাছে রেয়াল মাদ্রিদ।
৪৭ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে ভালেন্সিয়া। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.