ইউক্রেন ইস্যুর কারণে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগী জি-সেভেন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কজার্মানিতে জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট মোকাবিলার উপায় নিয়েও আলোচনা হবে। ইউক্রেন, মলদোভা ও ইন্দোনেশিয়াও বৈঠকে যোগ দিচ্ছে।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুধু সামরিক তৎপরতা ও নিরাপত্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার উপরেও এই সংকটের কুপ্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেন সেই ধাক্কা সামলাতে উদ্যোগ নিতে চায়। সেই লক্ষ্যে শুক্রবার (১৩ মে) ও শনিবার (১৪ মে) জার্মানির উত্তরে ভাইসেনহাউস শহরে আলোচনায় বসছেন জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইউক্রেনের পর মলদোভার উপরেও রাশিয়ার হামলার আশঙ্কাও তাদের দুশ্চিন্তার কারণ৷ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
জি-সেভেন গোষ্ঠীর বর্তমান সভাপতি জার্মানি। এছাড়া ব্রিটেন, ক্যানাডা, ইটালি, ফ্রান্স, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে শনিবার পর্যন্ত আলোচনা করছেন। ইউক্রেন ও মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও শুক্রবারের অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।
ইউক্রেন সংকটের কারণে মলদোভায়ও শরণার্থীর ঢল নামায় দরিদ্র দেশ হিসেবে সে দেশের সরকার পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। মলদোভায় রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতার ফলেও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে। এমন অবস্থায় ইউরোপ থেকে আরও সহায়তার আশা করছে সে দেশ।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বে শস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আফ্রিকায় খাদ্য সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে  জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে শস্য ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি কার্যত থমকে গেছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, শুধু ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরেই প্রায় আড়াই কোটি টন শস্য আটকে রয়েছে। পুরো বিশ্বে বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ মানুষের জন্য সেই শস্য সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। ফলে দ্রুত গতিতে এবং দক্ষতার সঙ্গে এমন খাদ্য সংকটের মোকাবিলা করতে চায় জি-সেভেন। জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর বর্তমান সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদিও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুক্রবার বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। নভেম্বরে সে দেশে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের উপস্থিতির সম্ভাবনা নিয়েও কথা হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। তার মতে, বিশেষ করে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে আরও দ্রুত ও আরও বেশি সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো উচিত, যা ন্যাটোর মানের হতে হবে৷ ট্রাসের মতে, ইউক্রেনে পুটিনের পরাজয় ঘটলে তবেই অন্য দেশের উপর রাশিয়ার আরও হামলা প্রতিরোধ করা যাবে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হাতে মূলত সোভিয়েত আমলের সরঞ্জাম থাকায় গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। সে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা তাই বৃহস্পতিবার (১২ মে) বার্লিনে পশ্চিমা দেশ থেকে বোমারু বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা সরবরাহের ডাক দেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আরও ভারি অস্ত্র সরবরাহ করলে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘাত বা পরমাণু যুদ্ধের যে আশঙ্কা করছেন, কুলেবা তা উড়িয়ে দেন৷ তার মতে, সে ক্ষেত্রে সেটাই হবে রাশিয়ারও শেষ যুদ্ধ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.