দূর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যা? চাঁপাইনবাবগঞ্জে পপুলার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিঃ এ শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আতাহার এলাকায় পপুলার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিঃ এ এক শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

আজ শুক্রবার সকালে ওই কারখানার মেশিনে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দূর্ঘটনায় ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এনিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
মৃতের আত্মীয়, থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কারখানা মালিকের বক্তব্যেও ঘটনার ভিন্নতা পাওয়া গেছে। সরকারীভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও ওই কারখানায় শিশু শ্রমিক কাজ করারও প্রমান পাওয়া গেছে।
মেশিন বন্ধ রেখে মেশিন পরিস্কার করার সময় হঠাৎ মেশিন চালু হয়ে এ ঘটনায় শ্রমিক রাজুর মৃত্যু হওয়ায় এবং আজ শুক্রবার কারখানা বন্ধের দিনে এরকম একটি ঘটনায় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মনে নানা প্রশ্ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত যুবক সদর উপজেলার আতাহার এলাকার বুলনপুর গ্রামের মৃত রাসেল আলীর ছেলে রাজু (১৯)।
এঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাইদুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর যোগসাজসে নানা ভয়ভীতি ও কু-পরামর্শ দিয়ে কৌশলে নিহত শ্রমিকের পরিবারের কাছ থেকে নাদাবীনামা লিখে নিয়ে এবং এঘটনার সঠিক তদন্ত না করেই ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর ও দাফনের অনুমতি দেয়া হয় এবং তড়িঘড়ি করেই লাশ দাফন সম্পন্নও হয়।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের কৌশলসহ ঘটনার সবকিছু মিলিয়ে এঘটনায় বড়ধরণের একটি রহস্য লুকিয়ে আছে বলেও মনে করছেন এলাকাবাসী। এঘটনার আসল রহস্য উৎঘাটন করে প্রকৃত ও সত্য ঘটনা বের করে, যে বা যারাই, যেভাবেই জড়িত থাকুক, এঘটনার সঠিক বিচার দাবী করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় ও কারখানা সুত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ¦ মো. সাদিকুল ইসলাম ও আলহাজ¦ মো. রমজান আলীর যৌথ মালিকানাধিন “আদর্শ ব্রাদার্স অটো রাইস মিলস্” এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান “পপুলার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিমিটেড” এ শ্রমিক হিসেবে চাকুরি করতো নিহত যুবক মৃত রাসেল আলীর ছেলে রাজু (১৯)।
আজ শুক্রবার সকালে সে ওই মিলে রাজু কাজ করতে যায়। সকালে সে কারখানার মেশিন পরিস্কার করার সময় হঠাৎ মেশিনটি চালু হয়ে পড়লে রাজু মেশিনের হপারে ঢুকে যায় এবং তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ওই কোম্পানীর একটি পিকআপে করে জেলা হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক রাজুকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় হাসপাতাল চত্বরে মৃতের আত্মীয় স্বজনের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি ঝিলিম ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ মাইদুল ইসলাম মুকুল মৃতের নানাকে নাদাবিনামায় স্বাক্ষর করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে বললে নাদাবি নামায় স্বাক্ষর করে লাশ আতাহারের মৃতের নানার বাড়ি নিয়ে আসে বলে জানায় মৃত রাজুর নানা। যদিও উদ্বুদ্ধ ও কৌশল করে নাদাবি নামায় স্বাক্ষর করানোর কথা অস্বীকার করেছেন ওয়ার্ড সদস্য মুকুল।
তবে এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। “মৃত রাজু বন্ধ থাকা মেশিন পরিস্কার করছিল, তাহলে বন্ধ মেশিনের সুইচ অন করলো কে? আর মেশিনে কাজ করছে রাজু জেনেও মেশিন চালু করলো কে? তারপর আবার ঘটনার পরপরই তোড়জোড় শুরু হয় লাশ দাফন করার জন্য রাজুর পরিবারের লোকজনের উপর চাপও। সে দুর্ঘটনার শিকার নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে? পুলিশ সবকিছু তদন্ত না করেই কেন লাশ হস্তান্তর করলো? আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতেই কি তদন্ত ছাড়ায় পুলিশের লাশ হস্তান্তর? অন্যদিকে, রাজুর পরিবারের লোকজনের চোখের জল ঝরতে থাকা অবস্থায়ই এলাকার ইউপি সদস্যই বা কেন নাদাবীনামায় স্বাক্ষর করাতে তোড়জোড় শুরু করলেন? এছাড়া কারখানা মালিকপক্ষের সাথে কোন আলোচনা বা বা রাজুর পরিবারকে কোন সান্তনা পর্যন্ত না দিয়েই লাশ দাফনের জন্য উঠেপড়ে লাগায় স্থানীয়দের মনে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। রাজুর মৃত্যুর আসল রহস্য জানতে চায় সচেতন মহল।
“আদর্শ ব্রাদার্স অটো রাইস মিলস্” এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান “পপুলার পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডস লিমিটেড” এ কারখানায় রাজুর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে সরজমিন গেলে কারখানায় মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল সরজমিন দেখতে চাইলেও প্রতিনিধিকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
তবে প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে কথা হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব মো. রমজান আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমি জেলার বাইরে থাকায় ঘটনা শুনেছি। এটি একটি দূর্ঘটনা। ছুটির দিনে কারখানায় কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কিছু কাজ ছুটির দিনেও করতে হয়। বন্ধ মেশিন চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই রনি দাসের সাথে কথা বলতে বলেন। এস.আই রনি দাস জানান, শ্রমিক রাজু মেশিন পরিস্কার করার সময় হঠাৎ মেশিন চালু হয়ে গেলে মেশিনের হপারের মধ্যে চলে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়ায় পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাফফর হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, পরিবারের অভিযোগ না থাকায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন না করেই কেন তড়িঘড়ি করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো, এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ঘটনার সঠিকভাবে তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাফফর হোসেনের।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.