কবি শামসুর রাহমান এর ৮৯তম জন্মদিন আজ

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: বাংলা সাহিত্যের নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ৮৯তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরানো ঢাকার মাহুতটুলির ৪৬ নম্বর বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এই কবি।

মুখলেসুর রহমান চৌধুরী এবং আমেনা খাতুন দম্পতির কোল জুড়ে আসেন বাংলার এই চিরঞ্জীব কবি। ১৩ ভাই বোনের মধ্যে ৪র্থ ছিলেন তিনি।

দুইবাংলার এই জনপ্রিয় কবির জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্বের সার্চ জায়ান্ট গুগল। তারা তাদের ওয়েবের ডুডলে পরিবর্তন করে কবি শামসুর রাহমানের একটি স্কেচ রেখেছে।

১৯৫৭ সালে সাংবাদিকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। দৈনিক মর্নিং পত্রিকায় সহসম্পাদক হিসেবে ছিলেন তিনি। তার কিছুদিনের মধ্যে তিনি রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৫৯ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬০ এ পুনরায় দৈনিক মর্নিং পত্রিকায় যোগ দিয়ে ১৯৬৪ পর্যন্ত সেখানেই সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান (স্বাধীনতা পরবর্তী দৈনিক বাংলা) পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন।

১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি একইসাথে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। সবশেষ তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সময়কালীন প্রতিবাদী কবিদের মধ্যে একজন শামসুর রাহমান। অন্যায়ের বিরুদ্ধের কবির হাতিয়ার ছিল কবিতা। তার ছদ্মনাম ছিল ‘মজলুম আদিব’। তার সেসময়কার উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলো হচ্ছে- হাতির শুঁড়, টেলেমেকাস, ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা, আসাদের শার্ট, আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত হয়ে তিনি লিখেন কালজয়ী দুই কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই দুই কবিতা ধারন করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল। তিনি স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রচনা করেছেন বহু কবিতা। লিখেছেন মুক্তি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে। মৌলবাদীরা বারবার বিতর্ক তুলেছে এই অসাম্প্রদায়িক কবিকে নিয়ে। তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে বহুবার। তবে এত কিছুও তাকে একচুল নড়াতে পারেনি তার বিশ্বাস থেকে।

বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ কবি শামসুর রাহমানে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৬৬টি, উপন্যাস ৪টি, প্রবন্ধগ্রন্থ ১টি, ছড়ার বই ৮টি, অনুবাদ ৬টি। তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কবিকে তার পঞ্চাশ বর্ষপূর্তিতে জাতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় ১৯৭৯-এ এবং ষাট বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয় ১৯৮৯ সালে।

সবশেষে ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট প্রাকৃতিক নিয়মে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন তার সৃষ্টিতে। আজীবন কবিতায় সমর্পিত এ কবি বেঁচে থাকবেন বাঙালির সত্তায়। বাংলা কবিতায় তিনি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। উভয় বাংলায় সমকালীন সময়ে অন্যতম কবির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হন তিনি।

উল্লেখ্য, কবির ৮৯তম জন্মদিনে বাংলা একাডেমি আজ মঙ্গলবার বিকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা করবেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ চৌধুরী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.