একজন শিল্পীকে এমনটাই করতে হলো কেন? সালমা

 

https://www.youtube.com/watch?v=gVUTF5C-p-c

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: সালমা আক্তার জনপ্রিয় একজন সংগীতশিল্পী। গানের রিয়্যালিটি শো ‘ক্লোজআপ-1’ তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এর দ্বিতীয় আসরের বিজয়ী। লোকসংগীতে পারদর্শী তিনি। ফকির লালন সাঁইয়ের গান দিয়ে আসর মাতিয়ে তুলতে পারেন সালমা। ভক্তরা তাকে এভাবে দেখতে পছন্দ করেন। সালমা যা বললেন–

মাত্র ১৩ বছর বয়সে ক্লোজআপ ওয়ানে এসে স্টেজ মাতিয়েছেন?

ক্লোজআপ ওয়ান কম্পিটিশনই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় এবং ফার্স্ট টার্নিং পয়েন্ট। আমার গুরুজির নাম ওস্তাদ শফি ম-ল। তার কাছে ৪ বছর বয়সে আমার গানের হাতেখড়ি হয়েছে। গুরুজির কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নিয়েছি। সপ্তাহে দুদিন গান শিখতে যেতাম।

 

 

সেই সময়ে অনুষ্ঠানে গেয়েছেন?

আমি ছোটবেলা থেকেই গুরুর সঙ্গে বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতাম। অনুষ্ঠান দেখতাম। অনুষ্ঠানে গুরু আমাকে নিয়ে যেতেন। আমি গানও গাইতাম। আমার কিন্তু তখন এলাকায় এক ধরনের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কারণ ততদিনে মানুষ জেনে গেছে আমি ভালো গান গাইতে পারি। ছোট ছোট প্রোগ্রাম হলে আমাকে গান গাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যেত। আমি খুব উপভোগ করতাম।

গান গেয়ে তখন কি উপার্জন হতো?

যারা শিল্পী তারা জন্মগতভাবেই শিল্পী। আমার খুব মনে আছে, আমি কখনো কাউকে ফ্রি’তে গান শোনাতাম না। প্রথমে গান গাইতাম কিন্তু লোক জড়ো হলে বলতাম এখন গলা ব্যথা করছে। তবে গান শোনাব একটা শর্তে, যদি আমাকে একটা কোক খাওয়ানো হয় কিংবা কখনো বলতাম আমাকে দুই টাকা করে দেওয়া হয়, তাহলেই গান শোনাব। এর মানে আমি ফ্রি’তে গান করতাম না।

গানের যে বাজারমূল্য আছে সেটা বুঝতে পেরেছিলেন?

আমি জানতাম না। আমার কেন যেন মনে হতো সবাই যদি কোনো কিছু করে টাকা উপার্জন করতে পারে, গান গাওয়াটা তো একটা কাজ। আমি গান গাচ্ছি, আমার কষ্ট হচ্ছে না। আমার গলা ব্যথা করতো। আমি যে জার্নি করে প্রোগ্রাম করি আমার তো কষ্ট হচ্ছে, তাহলে আমাকে কেন টাকা দেওয়া হবে না?

তাহলে টাকা পেতেন?

হ্যাঁ, আমার মনে আছে কুষ্টিয়ার আশ-পাশের গ্রামে, কুষ্টিয়া শহরে যেখানে আমি প্রোগ্রাম করতে গেছি, সেখানেই ১০০ টাকা, ৫০ টাকা করে পেতাম, সেটা খুবই ভালো লাগতো। কারণ ওই বয়সে আমি গান করছি সেটার জন্য একটা পুরস্কার পাচ্ছি। সেটা তো বেশ আনন্দের।

প্রথম শো কথা মনে আছে?

মনে আছে, ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটা ফাংশনে গিয়েছিলাম। সেটা ২০০১ সালের কথা। আমি তখন স্কুলে পড়ি। একেবারে ছোট। এমনিতে গুরুজি কোথাও গেলে আমি সঙ্গে যেতাম। আমার চাচাদের সঙ্গে যেতাম। তারাই আমাকে গাইতে নিয়ে যেত। সাঁইজির গান করার কারণে এলাকায় এক ধরনের জনপ্রিয়তা চলে এসেছে সেই ছোটবেলায়।

পারিবারিক চর্চা ছিল?

প্রতি মাসের এগারো তারিখে আমাদের বাড়িতে ভাবসংগীতের আসর হতো। কারণ আমার কাকারা সবাই ভাবসংগীত করতেন। সেভাবে বললে পারিবারিক চর্চা তো ছিলই। আমার গুরুজি শফি ম-লের কাছে নিয়ে যায় আমার বড় ভাই নাহারুল ইসলাম।

স্বাধীনভাবে গান গাইতেন, সেখান থেকে প্রতিযোগিতায় আসা কঠিন ছিল?

অডিশনে যাওয়ার পর তো ভয় পেয়েছিলাম। কারণ আমার সামনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই অনেক গুণী মানুষ। ইমতিয়াজ বুলবুল বাবা, কুমার বিশ্বজিৎ স্যার, শ্রদ্ধেয় ফাহমিদা নবী। প্রত্যেকেই। তবে আমার ভয়ের জায়গাটা ছিল গানের জন্য না, সেটা ছিল অন্য রকম। কারণ আমি তখন আন্ডার এজ ছিলাম (অপ্রাপ্ত বয়স্ক)। সে কারণেই ভয়ে ছিলাম।

 

ঠিক কি কারণে এই ভয়টা ছিল?

আমার বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। আর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ১৬। সে কারণে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে। নিয়ম অনুসারে আমার তো বাদ পড়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে বাদ দেওয়া হয়নি। কারণ অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে আমি পড়াশোনা করতে পারছি না। আমার পড়ালেখায় তিন বছরের একটা স্ট্যাডি গ্যাপ দেখানো হয়েছে। তখন আমি সত্যিকার অর্থেই ক্লাস সিক্সে পড়ি। সেখানে তো ব্র্যাক অব স্ট্যাডির প্রশ্নই আসে না।

একজন শিল্পীকে এমনটাই করতে হলো কেন?

আয়োজকরা আমাকে পারিবারিকভাবে অসচ্ছল দেখিয়েছেন। কারণ বিচারক ও আয়োজকদের কেউ চাইছিল না আমি বাদ পড়ে যাই। এনটিভির যারা আয়োজক তারাও সেটা চাননি। তারা আমার মধ্যে হয়তো সেই ট্যালেন্টটা দেখেছেন। আর সালমাকে সেখানে গরিবি হালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কারণ কেউ তখন হারতে চাইছিল না।

গরিব বলা বা দেখানোর বিষয় পুরোটাই তাহলে গল্প?

আমি অভিয়াসলি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলাম সেটাও সত্য। আমার বাবা আমাকে সেই কষ্টটা কখনো বুঝতে দেননি। আমাকে গান শিখিয়েছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন। আর এই প্রোগ্রামটা পুরো প্ল্যানিং ছিল যেখানে আমাকে আসলে গরিব সাজতে হয়েছিল।

সাধারণ জীবনের সালমা থেকে অসাধারণ সালমা হয়ে উঠা কিভাবে উপভোগ করেন?

জীবনের প্রত্যেকটা টাইমই মানুষ যদি মনে করে আমি আমার জীবনটা উপভোগ করব, সেটা করা সম্ভব। হ্যাঁ, একটা সময় আমি কষ্ট করেছি। কিন্তু আমার চাওয়া পাওয়া ছিল। আমি খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করি। আর সাধারণ জীবনেই তো আছি।

এলাকায় কনসার্ট হচ্ছে সালমা দাওয়াত পায়নি, এমনটা হয়েছে?

এমনটা তো অনেকবারই হয়েছে। আমি তখন রাগ করে বলতাম দেখো একটা সময় তোমরা আমাকে লাখ টাকা দিলেও আমি গাইব না। ইনফ্যাক্ট এটাই সত্যি হলো। এটাই হয়। আমি নিজের এলাকার শো মাঝেমধ্যে করতে পারি না। ইভেন গত সেপ্টেম্বরে লন্ডন যাওয়ার কারণে আমি এলাকার শো’টা করতে পারিনি। কিন্তু কথা তো মিলেই গেল।

দেশেবিদেশে কনসার্ট, লাইটক্যামেরায় সালমার ব্যস্ততা বেড়েছে, এমন ব্যস্ততায় অনেকেই গানের চর্চা থেকে দূরে সরে যান, আপনার বেলায় কি এটা সত্য?

যারা গানের সঙ্গে আছে তার কখনো গান ছাড়তেই পারবে না। গানের সঙ্গেই তো আমার বসবাস। সেখান থেকে এই চর্চাটা আমার জীবনেরই অংশ। একটা গ্লাস যেমন ধুলো জমলে পরিষ্কার করতে হয়, একজন শিল্পীকেও তার কণ্ঠের জন্য কাজ করতে হয়, তা না হলে ময়লা জমে যায়। আর যারা সেই চর্চা করে না সেটা ইলজিক্যাল, সেই উত্তরটা আমার জানা নেই। বরং গান না গাইলে মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাব।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.